দুয়ারে আরো এক বাবরি ধ্বংসযজ্ঞ!যোগী সরকার শুরু করছে নীল নকশা, জানুন কিভাবে চলছে পুরো ষড়যন্ত্র

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG_20210408_204705

নিউজ ডেস্ক : বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে সেখানে বিতর্কিত রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা করে যে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা চুপ থাকবে না তা বোঝা গিয়েছিল বিতর্কিত রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিনেই। সেদিন কট্টর উগ্রবাদীদের কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল, বাবরি তো সের্ফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশি মথুরা বাকি হ্যায়। আর সেই স্লোগানকে সামনে রেখে এবার তাদের ষড়যন্ত্রের বাকি অংশ বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হল উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। দেখে নেওয়া যাক কিভাবে তারা ঘুটি সাজাচ্ছে কাশির ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানভাপী মসজিদ ধ্বংস করতে। যে মসজিদটি কাশীতে ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেছিলেন মহান মুঘল বাদশাহ আলমগীর ওরঙ্গজেব।

 

 

কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির এবং ওরঙ্গজেব নির্মিত জ্ঞানভাপি মন্দির পরস্পরের সহচর্যে বিদ্যমান বহু বছর ধরে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বারবার হিন্দুত্ববাদীরা চেষ্টা করেছে মসজিদটি দখল করে নেওয়ার। তাতে বাধ্য হয়ে তারা শরণাপন্ন হয়েছে আদালতের। কিন্তু সে সময় মোদি রাজত্ব ছিল না। ছিলনা সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা গদী মিডিয়ার তৎপরতাও। তাই বিষয়টা নিয়ে অতটা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়নি কোনদিন। তবে এর আগে যতবারই হিন্দুত্ববাদীরা মসজিদ দখল করে সেটি মন্দিরের অংশ করার জন্য আদালতে গিয়েছে ততবারই আঞ্জুমান এন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি ভারতের উপাসনা স্থল এর ব্যাপারে বিশেষ আইন এর সাহায্য নিয়েছে মসজিদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে। যে আইন অনুসারে, ১৫ ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারতের ভূখণ্ডে বিদ্যমান থাকা যে কোন ধর্মীয় উপাসনালয় পরবর্তীতে আর অন্য কোন ধর্মের ধর্মস্থানে পরিবর্তন যোগ্য নয়।

 

সে কারণে ১৯৯৮ সালে বারানসি জেলা আদালত মসজিদটির ধর্মীয় চরিত্র নির্ধারণের জন্য এটির ব্যাপারে উপযুক্ত প্রমান জোগাড়ের জন্য নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেয়।
তবে এই বিষয়টিতে ভারতের ধর্মীয় উপাসনালয় এর ব্যাপারে বিশেষ আইন দেখিয়ে বিষয়টিতে আর কোনো শুনানি না গ্রহণের আবেদন করে মসজিদ কমিটি। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের শুনানির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে।

 

কিন্তু গত ৬ মাসে হাইকোর্ট আর সেই স্থগিতাদেশ দেয়নি। যার সুযোগ নিয়ে হিন্দুত্ববাদি ভি এস রাস্তোগী, ওই মন্দিরের দেবতা বিশ্বেশ্বরের পক্ষে এক আবেদন করে মসজিদটিকে হিন্দুদের কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে দিয়ে দেওয়ার দাবি করেন। কিন্তু এমন পিটিশন সংবিধানের আইনের পরিপন্থী বলে তা বাতিলের জন্য মসজিদ কমিটি কোর্টের দ্বারস্থ হলেও কোর্ট তা গ্রহণ করেনি।

 

এবার রস্তগীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বারানসি জেলা আদালত মসজিদের নিচের প্রত্নতাত্ত্বিক গঠন সম্পর্কে খোঁজখবর করার জন্য ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে নির্দেশ দিয়েছে। আবার এই জরিপের সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। রস্তোগীর দাবি, বাদশা আলমগীর ওরঙ্গজেব ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এর একাংশ ভেঙে তার ওপরে গড়ে তুলেছিলেন ঐতিহাসিক জ্ঞানবাপী মসজিদ। তাই এটা এখন হিন্দুদের দিতে হবে।

তবে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দাবি সঠিক হলেও ভারতীয় সংবিধানের আইন অনুসারে স্বাধীনতার সময় যেহেতু এই মন্দির এবং মসজিদের পৃথক অস্তিত্ব ছিল তাই এদের ধার্মিক চরিত্রের পরিবর্তন বা রূপান্তর করা সম্পূর্ণ আইনবিরুদ্ধ তা সত্ত্বেও আদালতের তরফ থেকে এই ব্যাপারে হিন্দুত্ববাদীদের দাবি অনেকটাই গ্রহণ করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ঠিক এই ভাবেই বাবরি মসজিদের ভাগ্য ধীরে ধীরে হিন্দুত্ববাদীদের নাগালে গিয়েছিল। তাই যদি হিন্দুত্ববাদীরা এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে তাহলে আশঙ্কা, আরও এক বাপরে ধ্বংসযজ্ঞ হয়তো খুব বেশি দূরে নয়। আর হতে পারে এই দ্বিতীয় বাবরি সংঘটিত হবে কোন গেরুয়াবাদী সরকারের অধীনে আদালতের নির্দেশে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর