বিজেপি জিতলে চাকরি দেবে! দেখুন ২০১৪ থেকে কত চাকরি দিল বিজেপি সরকার

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

Hero_Image

সাইফুল্লা লস্কর 

বিশেষ পর্যালোচনা : শিক্ষিত যুবক যুবতীদের জন্য উপযুক্ত সংখ্যক কর্মসংস্থান আমাদের দেশে কোনোদিনই ছিল না তবে পরিস্থিতি বর্তমানে যে অবস্থায় পৌঁছেছে ততটা খারাপ স্বাধীন ভারত কোনোদিন প্রত্যক্ষ করেনি। দেশের সর্বত্রই এখন চাকরির বাজারে খরা লক্ষণীয়। এই মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যা এখনও পর্যন্ত পূরণ তো হয়নি বরং দেশে কংগ্রেস জমানায় যে হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছিল তাও ব্যাপক পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে গত ৭ বছরে বিজেপির শাসন আমলে। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনকে সামনে রেখে বরাবরের মতো এবারেও বেকারদের মন জয় করতে তাদেরকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সমস্ত রাজনৈতিক দল। রাজ্যে তৃণমূলের সময়ে চাকরির বাজার খুব আশা ব্যঞ্জক ছিল না আবার মোদী সরকারের কেন্দ্রের মতো অতটা খারাপও ছিল না। তা সত্বেও মোদির দল বিজেপি এরাজ্যে শিক্ষিত যুবক যুবতীদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে খুব বড়ো গলায়। সরকারি কর্মচারীদের দিচ্ছে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার প্রতিশ্রুতিও। তারা যদি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জয় লাভ করে, কতটা রাখবে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি সেটা কেউ জানেনা তবে এখনও পর্যন্ত তারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় থেকে কতটা চাকরি দিয়েছে সেটা দেখলে সেই অতীত থেকেই ভবিষ্যৎ বোঝা যাবে ধীরে নিয়েই আজকের পর্যালোচনা।

 

কংগ্রেস আমলে ২০১৩-১৪ অর্থ বর্ষে NSSO এর রিপোর্ট অনুসারে চাকরি তৈরি হয় ৭ লক্ষ। তখন বিরোধী দল বিজেপির তরফ থেকে তৎকালীন চাকরির বাজারকে মোদী বলেছিলেন চাকরীহীন অবস্থা(Jobless State) । কিন্তু মোদি ক্ষমতায় আসার পর তার ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতির কথা তো তাবেদার মিডিয়া জিজ্ঞেস করেনা কিন্তু ২০১৬ সাল পর্যন্ত যতদিন সরকার গণনা করতো বেকারদের সংখ্যা তখনও পর্যন্ত মোদি সরকার বছরে মাত্র ২ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তী বছরে বেকারত্বের সংখ্যা এতটা ব্যাপক আকার ধারন করে যে মোদি সরকার বেকারদের সংখ্যা গণনা করা এবং তা প্রকাশ করা ছেড়ে দেয়। পরিবর্তে অমিত শাহ দেশের শিক্ষিত বেকারদের পকোড়া ভেজে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরামর্শ দান করেন। আর এখন তো রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সব প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে মোদি সরকার। প্রায় ৪০০ টার বেশি রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা মূলত দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যেই তৈরি করেছিল কংগ্রেস সরকার। কিন্তু যদি সরকার সব বেসরকারিকরণ করে মাত্র ২৪ টি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে চাকরির বাজারে আরো খরা সৃষ্টি হবে স্বাভাবিক কারণে।

 

নির্দিষ্টভাবে সংখ্যা হিসেব করে দেখা যাক কেন্দ্রীয় স্তরের সব থেকে উচ্চ পর্যায়ের কর্মসংস্থান প্রদানকারী সংস্থা UPSC কত জনকে চাকরি দিচ্ছে এখন পূর্বের বছরগুলোর তুলনায়। তারা গত বছর ৭৯৬ টি শূন্যপদ প্রকাশ করে কিন্তু এই বছর এই সংখ্যা ১০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭১২ টিতে। তাদের দ্বারা নিয়োগ করা UPSC ক্যাডারদের সংখ্যা ২০১৩ তে ছিল ১৩৬৪ যা এখন ৪৭ শতাংশের বেশি কমে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭১২ টিতে।

UPSC আইএএস বা আইপিএস দের মতো ক্যাডার জন্য পরীক্ষা নেওয়া ছাড়াও আরো অনেক পরীক্ষা নিয়ে থাকে যেমন কম্বাইন্ড মেডিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষা,ইন্ডিয়ান ইঞ্জনিয়ারিং সার্ভিস পরীক্ষা, ইন্ডিয়ান ইকোনমিক সার্ভিস পরীক্ষা ইত্যাদি। এমন সব পরীক্ষা মিলিয়ে তারা ২০১৬-১৭ সালে নিয়োগ করেছিল ৬১০৩ জনকে যা মাত্র ৩ বছরের মধ্যে ব্যাপক পরিমাণে হ্রাস পেয়ে ২০১৯-২০ এ এসে পৌঁছায় ৪৩৯৯ এ।

শুধু UPSC নয় রেল, এসএসসি এর মতো বৃহৎ চাকরি প্রদানকারী কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একজন পূর্বের তুলনায় তাদের দ্বারা হওয়া নিয়োগের সংখ্যা ৩০-৪০ শতাংশের বেশি হ্রাস করে দিয়েছে। এবার সপ্তম বেতন কমিশনের কোথায় আসা যাক। একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসে বিজেপি। কিন্তু সেখানে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন তো দূরের কথা সেখানে সরকারি কর্মচারীরা গত এক বছরের বেশি সময় থেকে তাদের বকেয়া ডি এ পর্যন্ত পায়নি। আর এবার থেকে সরকারি চাকরির বলাই প্রায় তুলে দিয়ে সব বেসরকারিকরণ এবং আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করতে যাচ্ছে তারা।

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে বিজেপি এত দিন শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের দেওয়া তাদের প্রতিশ্রুতি কতটা সুচারু ভাবে রেখেছে। তাই এ রাজ্যে যে এমনটাই হবে সেটা আপনি ধরেই রাখতে পারেন যদি আপনি অতিপ্রত্যাশী কেউ না হন।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর