তাহিরপুরে ২৭ বৎসর আগের বিক্রিত জমি, ফিরিয়ে নিতে চান লাল মিয়া

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

received_3152850448274898

 

সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বাসিন্দা লাল মিয়া। তিনি ও তার বাবা মৃত আব্দুল মানিক মিয়া, ২৭ বৎসর আগে অর্থাৎ ১৯৯৩ সালে উত্তর পুরাণঘাট মৌজার ২১৫ সাবুক দাগের জমি বিক্রি করেন; দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল লতিফ সাহেবের কাছে। কিন্তু বর্তমানে লাল মিয়া এই জমি ফিরিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে! এমনকি জমিতে যেতে আব্দুল লতিফ সাহেবকে নিষেধও করেছে।

এদিকে মোঃ আব্দুল লতিফ সাহেব নিরক্ষর সহজ সরল মানুষ হওয়ায়, কিছু বুঝতে না পেরে গ্রাম সালিশের আহ্বান জানান। হলহলিয়া পশ্চিম পাড়ার অবস্থানরত মোঃ নবাব মিয়ার মাধ্যমে ০৪/১২/২০২০ ইং রোজ শুক্রবার সালিশের তারিখ নিয়ে সালিশ আহ্বান করেন।

গতকাল শুক্রবার সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের আমতৈল নতুন মসজিদের বারান্দায় সালিশ বসে। এসময় সালিশে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ আব্দুল জব্বার , মোঃ খুরশেদ ফকির , মোঃ ইসমাইল হোসেন সরকার , দঃ বড়দল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার জনাব আব্দুর রউফ , মোঃ ফিরোজ মাস্টার ,মোঃ নবাব মিয়া , মোঃ লাল মিয়া , মোঃ কালা মিয়া , মোঃ আবু বকর সিদ্দিক মিয়া , মোঃ শিবলু মিয়া , বাংলাদেশ আওয়ামী বঙ্গবন্ধু তৃণমূল কর্মী লীগ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক ও সাংবাদিক ফরহাদ ওয়েসি, আব্দুল কাদির, মোঃ আব্দুল মোতালিব , মোঃ লায়েছ মিয়া সহ আরো বেশ কয়েকজন।

সালিশের প্রথমে মোঃ আব্দুল লতিফ সাহেবের বক্তব্য শুনানিতে তিনি বলেন, মোঃ লাল মিয়া এক হিসেবে আমার শশুর হয়। এই জমিটি আমার কাছে বিক্রি করার সময় ফসল করার অনুপযুক্ত ছিল। আমার শশুর লাল মিয়ার মায়ের জমি লাল মিয়া কিনে রাখায়, তিনি ও তার বাবা দুজনে মিলে আমার কাছে মোট ৪১ শতাংশ জমি একই দাগে অর্থাৎ সাবুক ২১৫ দাগে বিক্রি করেন। আমিও কিনেও রাখছি ২১৫ দাগে । আমাকে চতুর্সীমা গেয়ে ২১৫ দাগে দলীল করে দিয়েছে। আমি ২৭ বৎসর ধরে আস্তে আস্তে জমিটি ফসলের উপযুক্ত করে তোলি। এখন ইদানীং আমার শশুর লাল মিয়া আমার জমি বিক্রি করার জন্য ঘুরতেছে মানুষের কাছে। যাদের কাছে বিক্রি করতো বলতেছে, তারা এসে আমাকে বলতাছে এমন এমন।

তখন আমি আমার শশুরকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলে আমার জমি অন্যদিক দিয়া। আমাকে যেখানে যেতে বলতেছে, সেখানে জমির মূল্য ৩০ শতাংশের মূল্য দেড় লক্ষ টাকা ধরে। আর আমার বর্তমান জমির মূল্য আছে ৪ লক্ষ টাকা ধরে। তাই আমি এই জায়গা দেখে কিনে রাখছি এবং দখল ছাড়বনা বললে, লাল মিয়া আমাকে এই জমিতে যেতে নিষেধ করে ও হুমকি দেয়। তিনি যে আমাকে জমিতে যেতে নিষেধ করেছেন এর সাক্ষীও আছে।

এখন আপনারাই বলেন আমি কী করবো? আমি আপনাদের কাছে একটাই দাবী জানাই, আমি সহজ সরল মানুষ কিছু বুঝিনা। আমার দলীলে দখলে যেখানে আছে, আমি সেখানেই থাকতে চাই। কারণ আমি এই জায়গা দেখে কিনে রাখছি। অন্য কোন জায়গা কিনে রাখি নাই। ”

এদিকে লাল মিয়া বক্তব্য শুনানিতে তিনি স্বীকার করেন সাবুক ২১৫ দাগে জমি বিক্রি করেছেন এবং আব্দুল লতিফ সাহেবকে দলীলও করে দিয়েছেন। কিন্তু এখন রেকর্ডে বেজাল লাগছে, আমার আরেক জায়গাতে লতিফ মিয়ার নামে রেকর্ড হয়ে গেছে! এখন আমি দুই জায়গাতে জমি দিমু? তাই হাল দাগে যেখানে গেছে সেখানে যাক এই লতিফ মিয়া।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ঈসমাইল হোসেন সরকার সাহেব বললেন, “দেখো এটা কারো জায়গা কেউ নিছেনা। হয়ত আমিনে ভুল করে গেছে। এখন তোমরা যেহেতু নিজেরার মধ্যে উদল-বদল দলীল করে মীমাংসা করে ফেলো। তুমিইতো বলতেছো তুমি সড়কের সাইটে জমি বিক্রি করেছো। তাই লতিফ মিয়া সড়কের সাইটে যেখানে দখলে আছে সেখানেই থাকুক। তোমার যে জায়গাটি লতিফ মিয়ার নামে রেকর্ড হয়ে গেছে, সে জায়গাটি লতিফ মিয়া তোমাকে দলীল করে দিয়ে দিবো। আর তুমিও আবার এটা দলীল করে দিয়া দিবা। তাহলেই তো শেষ। নিজেরার মধ্যে ঝামেলা করার কী দরকার আছে?”

এদিকে লাল মিয়া ও তার ভাই কালা মিয়া, উদল বদল দলীল করে দিতে নারাজ দেখে, সালিশের সবাই রায় দিলো “দরকার হয় দুইটা দলীল করতে যা খরচ হয় তাও লতিফ মিয়া দিবো। তবুও তোমরা লতিফ মিয়ার দখলের জায়গাটা দলীল করে দিয়ে দাও । মোঃ খুরশেদ ফকির সাহেব, আব্দুর রউফ মেম্বার সহ মোঃ নবাব মিয়া বলেন, মুসলমান ও ঈমানের দিকে তাকালে জমিটা দিয়া দিতে হয়। তাই তোমাদেরকে আমরা সবাই মিলে অনুরোধ করছি এই সহজ সরল মানুষকে হয়রানি করার দরকার নাই।

এক পর্যায়ে লাল মিয়া বলেন, এই জমি আমার বাবার নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। অংশীদার হিসেবে এখন যৌথভাবে পর্চায় উঠেছে। তাই অংশীদার অনেকেই, তাই আমি একা দিতে পারবনা।

এই দিকে লাল মিয়ার ভাই কালা মিয়া এই জমি দিবেনা বললে, মোঃ ফিরোজ মাস্টার বলেন ; “শুনো আজকে যদি লতিফ মিয়ার রেকর্ডে যে জমিটা উঠেছে ওইটার মূল্য বেশি হতো, তাহলে তোমরা বলতা ” তোমার দলীলে দখলে যেখানে আছে সেখানে যাও!” তখন তারা সবার সাথে বুঝবে বলে টাইম নেয়।

এদিকে মোঃ খুরশিদ ফকির সাহেব বলেন, “তোমার বাবা জমি বিক্রি করে আবার কিভাবে তোমার বাবার নামে উঠে? এটা হয়ত তোমরা জালিয়াতি করেছো! কারণ তোমার বাবাও মারা গেছে। তাহলে কিভাবে মৃত ব্যক্তি। মৃত ব্যাক্তির জায়গা ধরায় বিক্রি করার পর? এখন এটা তোমাদেরকেই সংশোধন করে দিতে হবে। ”

তখন সবাই বললো , দলীলের খরচ পাতি দিলে সবাই দলীল করে দিবে কিনা। তখন লাল মিয়া ও তার ভাই কালা মিয়া সবার সাথে বুঝে জানাবেন বলেন। তখন উক্ত সালিশের সবাই বললো, তাহলে সবার সাথে বুঝ পরামর্শ করে আমাদেরকে জানাও। এই আলোচনা করে সালিশ শেষ করা হয়।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর