ট্রাম্পের বিদায়বেলায় বেসুরো জয়শঙ্কর, ট্রাম্পকে ভারতের স্বার্থ বিরোধী বলল মোদি সরকার!!

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

S_Jaishankar_PTI03-12-2020_000_1200x768

সাইফুল্লা লস্কর : আমেরিকার প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, আমেরিকার কোন স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু নেই শুধু আছে স্বার্থ। দেরিতে হলেও সেই কথাটিই উপলব্ধি করেছেন ভারতের বর্তমান বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আর সেই নীতির উপর ভর করেই তিনি আমেরিকার বিদায়ী রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মোদি সরকারের যে ঘনিষ্ঠতা ছিল সেটা থেকেই নিজেদেরকে মুক্ত করার জন্য সচেষ্ট হলেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এবং পোড়খাওয়া খাওয়া কূটনীতিবিদ এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারত বহুদিন থেকে চেষ্টা করলেও রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতার কারণে ভারত মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের সময়কালে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হবে।

ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের বর্তমান পরিমাণ প্রায় ৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের প্রকৃত লাভবান কারণ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ঘাটতি আমেরিকার পক্ষেই থাকে অর্থাৎ ভারত বর্ষ আমেরিকায় বেশি রপ্তানি করে আমদানির তুলনায়। এমন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য ভারতের মোদি সরকার ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক  বাণিজ্য চুক্তি করার প্রচেষ্টা করছে বহুদিন থেকে। এই চুক্তি সম্পাদিত হলে ভারত এবং আমেরিকার রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর দুটি দেশই তুলনামূলক অনেক কম শুল্ক আরোপ করবে।  ফলে বৃদ্ধি পেত দুই দেশেরই বাণিজ্য। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার পক্ষে কম লাভজনক এই চুক্তি সম্পাদনের সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্যকালে মোদির ভারত অনেক ক্ষেত্রে আমেরিকার সাহায্য পেলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে ভারতের ক্ষতির পরিমাণ ও নেহাত কম নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বহুদিন থেকে প্রাপ্ত জিএসপি বা জেনারালাইজড সিস্টেম প্রিফারেন্সেস সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন যার ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছিল ভারতবর্ষের প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতবর্ষকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে বাদ দেয়ায় ও ব্যাহত হয়েছিল ভারতের রপ্তানি। এছাড়াও পৃথিবীর সমস্ত দেশ থেকে আমেরিকাতে রপ্তানির উপরে যেসব অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প সেগুলির কিছুটা প্রভাব পড়েছিল ভারতবর্ষের রপ্তানিতে। ভারত বর্ষ ইরানের থেকে সস্তা তেল ক্রয় করতে পারেনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কারণেই। ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে চাবাহার বন্দর নির্মাণের মাধ্যমে ইরান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করলেও মার্কিনবিরোধী সে প্রচেষ্টাও অগ্রগতি লাভ করেনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কালে ভারতবর্ষের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ বা ট্রেড ওয়ার। ট্রাম্পের চীন বিরোধী নীতির কারণে এখন চীন আর আমেরিকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার নেই এবং তার ফলে পরোক্ষে লাভ হয়েছে ভারতের। তবুও যে সমস্ত ব্যাপারে ভারতবর্ষের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল সেগুলি সমাধানের ব্যাপারে মোদি সরকার বাইডেনের নীতির দিকেই তাকিয়ে আছে। মনে করা হয় জো বাইডেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় অনেকখানি উদার নীতির সমর্থক।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালের একেবারে শেষ লগ্নে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভারতের এমন অভিযোগের বেশকিছু কারণ দেখতে পাচ্ছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত হাউডি মোদি অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোটি কোটি টাকা খরচ করে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে সাহায্য করেছিলেন এই আশায় যে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হয়ে ভারতবর্ষকে চীনের বিরুদ্ধে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও মজবুত অবস্থান অর্জন করতে সাহায্য করবে।কিন্তু মোদির সে আশা অপূর্ণই থেকে গেল উল্টে মোদি যে ভয় করেছিল জো বাইডেনের উথানের সেটাই বাস্তব রুপ ধারণ করলো। জো বাইডেন ট্রাম্পের প্রতি মোদি সরকারের এই প্রত্যক্ষ সমর্থনকে যে ভুলে গেছে এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। আবার মোদি সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস এবং কাশ্মীর নীতির ব্যাপারেও জো বাইডেন কঠোর সমালোচনা করেছেন। রাশিয়ার থেকে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করে চীন এবং তুরস্ক আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় পতিত হয়েছে কিন্তু ভারত বর্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্যতার কারণেই এখনো সেই নিষেধাজ্ঞার বাইরে আছে।জো বাইডেন মোদি সরকারের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলে সেই নিষেধাজ্ঞা ভারতের উপরে যে পড়বে না এমনটা নাও হতে পারে। এই সমস্ত কথা মাথায় রেখেই মোদি সরকার ধীরে ধীরে ট্রাম্পের সঙ্গ ত্যাগ করে জো বাইডেনের কাছে ট্রাম্প বিরোধী পরিচয় দিতে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর