রাজনৈতিক কারণে ইন্দোনেশিয়ার সর্বাধিক প্রভাবশালী অরাজনৈতিক ইসলামী দল নিষিদ্ধ, কিন্তু অতি দ্রুত বাড়ছে জনপ্রিয়তা

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20210108-WA0004

সাইফুল্লা লস্কর : ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম বিরোধী রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো নিজের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে নিষিদ্ধ করল ইন্দোনেশিয়া তথা সারা বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী অরাজনৈতিক মুসলিম সংগঠন ফ্রন্ট পামেলা ইসলামকে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে জানিয়েছেন সংগঠনটি দেশের রাষ্ট্রীয় মতাদর্শকে আঘাত করে ইসলামী মতাদর্শ রাজনীতিতে প্রবেশ করাতে চাইছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার যুবসমাজ। অন্যদিকে নিষিদ্ধ হলেও দ্রুত গতিতে বাড়ছে এই সংগঠনটির জনপ্রিয়তা, বলছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, উইওন, আল-জাজিরার মত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ায় তা সফল হবে না বরং দলটির প্রভাব এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে অতিমাত্রায় অবদান রাখবে।

এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা ইতিহাস এবং সাফল্য :

বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। দ্বীপরাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় ৮৬ শতাংশ মুসলমান। জনসংখ্যার ১০ শতাংশ খ্রিস্টান এবং প্রায় ১.৭ শতাংশ হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। সংখ্যালঘুদের এত কম জনসংখ্যা হওয়া সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়াতে আছে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এখানে সমান মর্যাদা পায় প্রত্যেকটি ধর্ম এবং তার অনুসারীরা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সমান মর্যাদা পাওয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা ইসলাম বিরোধী নামধারী মুসলিমদের দ্বারা দেশকে ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলোর সঙ্গে মিলে বিপথে পরিচালিত করার ষড়যন্ত্র তৈরি হয়। কখনো দেশে মদ পরিবেশন করা বারের অনুমোদন দেওয়া তো কখনো নাইট ক্লাবের নিরাপত্তা প্রদান। আবার কখনো লেডি গাগার অশ্লীল মিউজিক কনসার্ট আবার কখনো অশালীন বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজন। আবার কখনো ইসলামকে সর্বসমক্ষে আক্রমণ করা হয়েছে ইসলাম বিরোধী দের দ্বারা। ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি এভাবেই ইসলামী মূল্যবোধ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল বরাবর। এইসব অপ-সংস্কৃতির হাত থেকে ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য এবং দেশের মানবতার সেবায় ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফ্রন্ট পামবেলা ইসলাম বা FPI ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সংগঠনটি দেশের মুসলিমদেরকে অপসংস্কৃতির হাত থেকে রক্ষা করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে সদা প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রবণ ইন্দোনেশিয়ায় মানবতার সেবায় নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে। নানা সময়ে সংগঠনটির প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে ত্রাণ এবং উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনামে উঠে এসেছে।

সংগঠনটি প্রতিবাদে দেশজুড়ে বন্ধ হয়েছে অসংখ্য মদ জুয়া কেন্দ্রিক বার, নাইট ক্লাব এবং পতিতালয়। একবার ইন্দোনেশিয়ায় লেডি গাগার পপ মিউজিক কনসার্ট এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সেটি বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয় এই প্রভাবশালী সংগঠনটি।

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে জাকার্তার খ্রিস্টান গভর্নর আহক কোরআন শরীফ বিরোধী মন্তব্য করে সারা বিশ্বের মুসলিমদের ভাবাবেগে আঘাত হানলে এই সংগঠনের উদ্যোগে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় সেন্ট্রাল এভিনিউ এ সমবেত হয় দুই লক্ষাধিক মুসলিম। তাদের দাবিতে দেশেটির সরকার বাধ্য হয়ে সেই গভর্নরকে বরখাস্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকেই জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে সংগঠনটির।

ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোর ইসলামবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ হোক বা মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর বর্বর আক্রমণের প্রতিবাদ, ভারতে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অথবা বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়ন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সর্বক্ষেত্রেই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে এগিয়ে এসেছে এই সংগঠনটি।

২০১৭ সালে সংগঠনটির অতি জনপ্রিয় প্রধান ও সুপরিচিত ইসলামিক স্কলার রিজিক শিহাব আত্মআরোপিত নির্বাচনে চলে যান সৌদি আরবে। ২০২০ সালের নভেম্বরে তিনি আবার দেশে ফিরলে জাকার্তা এয়ারপোর্টে তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিল লক্ষ লক্ষ জনতা। এই জনপ্রিয়তা সহ্য হয়নি ইসলামবিরোধী রাষ্ট্রপতি যোকো উইডোডোর। ডিসেম্বর মাসে করোনা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ছাড়া পেয়ে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসানের জন্য এক নৈতিক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা করেন। এই লক্ষ্যে তিনি হাত মেলান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। ফলে তার রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় বহুলাংশে। এমন ঘটনা প্রবাহে নিজের ক্ষমতার ওপর আসতে পারে ভেবেই এফপিআই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ পথে হাঁটলেন যোকই। তবে নিষিদ্ধ হলেও সংগঠনের জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়ছে দিনে দিনে। অনেক ক্ষেত্রে চীন বিরোধী অবস্থান নেওয়া সংগঠনটি জনপ্রিয়তা প্রবল হারে বাড়ছে বলে উঠে এসেছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক সমীক্ষায়। প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি ভবিষ্যতে আরও এক ইখওয়ানুল মুসলিমিন এর মত বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন পেতে যাচ্ছে মুসলিম বিশ্ব? এ প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্র সময়ই দিতে পারবে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন করেছেন ইন্দোনেশিয়ার বহু ইসলামী চিন্তাবিদ।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর