মার্কিন দূতাবাসের গায়ে লেখা কলেমা, ভিতরে উড়ছে তালিবানের পতাকা

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

resize-350x230x0x0-image-143192-1629392825

 

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পরিত্যক্ত মার্কিন দূতাবাসের ভবনটি তালিবানরা তাদের পতাকা দিয়ে রাঙিয়েছে। এদিকে, পাকিস্তান বুধবার বিশ্বকে ‘পুরানো দৃষ্টিভঙ্গি’ বাতিল এবং আফগানিস্তান সম্পর্কে একটি ‘বাস্তবসম্মত এবং বাস্তববাদী’ পদ্ধতিতে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র তাদের কালো তালিকায় রাখার বিষয়ে গতকাল তালিবান বলেছে, এটি দোহা চুক্তির লঙ্ঘন। পাশাপাশি তারা মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে।

গত ১৫ আগস্ট তালিবান নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরপরই মার্কিন কূটনৈতিক কর্মীদের কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরিয়ে নেয়া হয়। ভবনের ভেতরে কেউ না থাকলেও বুধবার তালিবানের দুই নিরাপত্তারক্ষীকে গেটে এবং আরেকজনকে ভবনের সামনের দিকে আহমদ শাহ মাসউদ মোড়ে দেখা যায়। তালিবানের একজন নিরাপত্তারক্ষী বলেছেন, ‘আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ভবনের নিরাপত্তায় থাকতে।’ দূতাবাসের সামনের প্রবেশপথে একজন ব্যক্তিকে তালিবান পতাকা বিক্রি করতেও দেখা যায়। তালেবান নিরাপত্তারক্ষীদের দেখা যায়, তারা শহরের চারপাশে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি ভবনগুলোকে রক্ষা করছে। তালিবানরা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে একশ’রও বেশি চোর ও ডাকাত ধরা পড়েছে, তালিবানরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করছে।

রাস্তার ধারে মানি চেঞ্জার আসমতুল্লাহ উজির আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ মানুষ এবং নিরাপত্তা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। … ডাকাতদের চিন্তার কারণে আমি রাতের বেলা সঙ্গীদের নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। এখন নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তালিবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ, যিনি এখন ভারপ্রাপ্ত সংস্কৃতি ও তথ্যমন্ত্রী, একটি সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেন যে, তালিবান প্রশাসনের অন্তর্বর্তীকালীন সেটআপ ঘোষণা করে যে, নিরাপত্তা এবং অর্থনীতি দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ যা সরকার প্রাথমিকভাবে মোকাবেলা করবে।

এদিকে, তালিবানের পক্ষে বুধবার পাকিস্তানের দেয়া বিবৃতিকে আফগান তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সমর্থন চাওয়ার জন্য ইসলামাবাদের একটি প্রচেষ্টা হিসাবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। বুধবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির এ বক্তব্য এমন সময়ে এল, যার একদিন আগেই তালিবান একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছিল। তবে সেখানে অন্তভুর্ক্তিমূলক ব্যবস্থাপনার দাবি উপেক্ষা করায় পশ্চিমা দেশগুলো এর সমালোচনা করেছিল। কুরেশি একটি মানবিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট এড়াতে সহায়তার জন্য ছয়টি দেশের আঞ্চলিক ফোরামে তালিবান পরিচালিত আফগানিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানোর পরামর্শ দেন। তিনি আফগানিস্তান নিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি ইরান, চীন, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি ভাচুর্্যয়াল বৈঠকের আয়োজন করেন। পরে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহ—আয়োজক আরেকটি বৈঠকের অংশ ছিলেন।

 

উভয় বৈঠকে কুরেশির বার্তা স্পষ্ট ছিল যে, বিশ্বকে নতুন বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। যদিও তিনি তা স্পষ্ট করে বলেননি, কিন্তু তার সাবধানে লিখিত বক্তব্যটিই যথেষ্ট ছিল যে, পাকিস্তান চায় বিশ্ব আফগান তালেবান সরকারের সঙ্গে কাজ করুক। ভাচুর্্যয়াল বৈঠকে কুরেশি বলেন, ‘নতুন পরিস্থিতির জন্য পুরানো দৃষ্টিভঙ্গি বাতিল করা, নতুন অন্তর্দৃষ্টি বিকাশ করা এবং বাস্তববাদী এবং বাস্তবসম্মত পদ্ধতির সাথে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।’

বিশ্ব যদি আফগানিস্তানকে পরিত্যাগ করে তাহলে সেখানে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মানবিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এ আশঙ্কার কারণে প্রতিবেশি দেশ হিসাবে নতুন সরকারের জন্য সমর্থন চাইছে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি আয়োজিত বৈঠকে বক্তৃতা করতে গিয়ে কুরেশি এমনকি আফগানিস্তানের বৈদেশিক মজুদ ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা কাবুল পতনের পর আমেরিকা আটকে রেখেছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে অবশ্যই আফগান জনগণকে প্রথমে রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, আফগানিস্তান তার বৈদেশিক মজুদ বা আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার অস্বীকার করলে আমরা দীর্ঘস্থায়ী আফগান জনগণের দুঃখকে বাড়িয়ে তুলব।’

মন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তান মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে বসে আছে। ‘আমরা সবাই আফগানিস্তানে দুর্ভিক্ষ, খাদ্য ঘাটতি এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রতিবেদন দেখেছি।’ তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তাদের কূটনৈতিক উপস্থিতি বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে প্রতি আহ্বান জানান।

অন্যদিকে, সিরাজউদ্দিন হাক্কানির মতো কিছু তালিবান মন্ত্রী মার্কিন সরকারের কালো তালিকাভুক্ত রয়েছেন। তালিবান বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসলামিক আমিরাত এ অবস্থানকে দোহা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করে যা যুক্তরাষ্ট্র বা আফগানিস্তানের স্বার্থে নয়।’ এতে বলা হয়েছে যে, ‘সম্মানিত হাক্কানী সাহেবের পরিবার ইসলামী আমিরাতের অংশ এবং তাদের আলাদা কোনো নাম বা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেই।’ দোহা চুক্তির অধীনে ‘ইসলামী আমিরাতের সকল কর্মকর্তা কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলাপচারিতার অংশ ছিল’ এবং তাই জাতিসংঘ এবং মার্কিন কালো তালিকা থেকে তাদের সরানো উচিত ছিল বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ এবং ‘আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ করার প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানায়। তারা বলেছে, ‘মার্কিন কর্মকর্তাদের এ ধরনের মন্তব্য অতীতের ব্যর্থ পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি এবং এ ধরনের অবস্থান আমেরিকার জন্য ক্ষতিকর।’ তালিবান সরকার কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে অবিলম্বে ‘ভুল নীতিগুলো’ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে।

সূত্র : ডেইলি ইনকিলাব

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর