এনবিটিভি ডেস্ক, পশ্চিম বর্ধমান, লাউদোহা: করোনা আবহে বন্ধ রয়েছে কাঁচামালের জোগান। মেলেনি উৎপাদনের বরাত, জোটে নি সরকারি সাহায্য। এই পরিস্থিতিতে কোনোক্রমে দিন কাটছে গৌরবাজার এলাকার তাঁতশিল্পীদের (Weavers)। আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছে নতুন প্রজন্ম । দুর্গাপুজো দোর গোড়ায় চলে এলেও মন ভালো নেই গৌরবাজার এলাকার তাঁত শিল্পীদের (Weavers) । কাঁচামালের অভাব আর মহাজনেদের কাছ থেকে বরাত না আসায় আশঙ্কায় দিন কাটছে তাঁত শিল্পী পরিবারগুলির ৷
লকডাউনের কারণে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন , অনেকে আবার বদলে ফেলেছেন নিজেদের জীবিকা । আবার অনেকের জীবনে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা’। তাঁতশিল্পীদের (Weavers) জীবনও তার ব্যতিক্রম নয় । করোনার প্রভাব পড়েছে তাদের জীবিকাতেও । তাই পুজোর মরসুমেও মন ভালো নেই তাঁত শিল্পীদের । লাউদোহা ব্লকের গৌরবাজার গ্রামের তাঁতশিল্পীরা এমনটাই জানালেন ।
গ্রামের তাঁতীপাড়ায় প্রায় ৭০ টি তাঁতশিল্পী পরিবারের বাস । তাঁত শিল্পই তাদের জীবিকা । একটা সময় সব কটি পরিবারই বংশ পরস্পরায় এই কাজের সাথে যুক্ত ছিল কিন্তু,পরবর্তী সময়ে এই কাজের কদর ও লাভ কমে যাওয়ায় অনেক পরিবারই পারিবারিক এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছে । তবুও এখনো পাড়ার পনেরো কুড়িটি পরিবার এই পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছে ।
শিল্পী (Weavers) সন্ধ্যা দালাল, বলরাম দালালরা জানান তারা মূলত তাঁতের ও তসরের শাড়ি, ওড়না ও গামছা তৈরি করেন । একটি কাপড় তৈরি করতে সময় লাগে তিন থেকে চারদিন । এক দিনে বেশ কয়েকটি গামছা তৈরি হয় । এই কাজের কাঁচামাল আসে বিহারের ভাগলপুর ও ওড়িশা থেকে। বাঁকুড়া ও আশপাশের জেলার মহাজনেরা হচ্ছে তাদের ক্রেতা ।
মরসুমের শুরুতেই মহাজনেরা শিল্পীদের অগ্রিম অর্থ ধার হিসাবে দিয়ে যান । উৎপাদিত জিনিস মহাজনদের মারফতে জেলার বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যায় । বলরামবাবু স্মৃতিচারণ করতে করতে বলেন, অতীতে তাঁতশিল্পের কদর ছিল গোটা রাজ্যজুড়ে । তখন দিনরাত প্রতিটি ঘরে শাড়ি-কাপড় তৈরীর কাজ চলত । মহাজনদের আসা-যাওয়া আর মাঁকুর শব্দে গোটা পাড়া গমগম করত । এখন সেসব অতীত, তাঁতশিল্পের সোনালী দিন হারিয়ে গেছে । বাজারে সস্তায় রকমারি শাড়ি চলে আসায় কদর কমেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ির । শিল্পীদের (Weavers) ক্ষোভ, অন্যান্য শিল্পের সাথে যুক্তরা সরকারি ভাতা পেলেও তারা সেই ভাতা পাচ্ছেন না । এই প্রসঙ্গে লাউদোহা ব্লকের বিডিও মৃনাল কান্তি বাগচী জানান , শিল্পীদের জন্যই রাজ্য সরকারের ভাতা প্রকল্প রয়েছে । তবে তার সুবিধা পেতে হলে আবেদন করতে হয় । সঠিক পদ্ধতিতে আবেদন করলে গৌরবাজার এলাকার তাঁতশিল্পীরাও যাতে সরকারি ভাতা পান সেই ব্যাপারে তিনি উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।