ইউজিসির স্নাতকস্তরের ইতিহাস থেকে বাদ মুসলিম, মুঘল

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

1625827520392

“History Repeats Itself”— এ কথা প্রায় মিথ্যে করে দিতে চলেছে ইউজিসির স্নাতক স্তরের ইতিহাসের বর্তমান সিলেবাস। মধ্যযুগের ইতিহাসকে প্রায় বাদ দিয়ে স্নাতক স্তরের ইতিহাসের পাঠ্যক্রম প্রকাশ করল ইউজিসি। এই পাঠ্যক্রমে হিন্দু ও হিন্দির ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এর সমূহ নিন্দা করেছেন।

ইসলামের উল্লেখ নেই

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক অধ্যাপক কিংশুক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ভারতীয় সংস্কৃতিতে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনদের আবাসস্থলের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে এবং তা বোঝানো হয়েছে, তবে তা বেশি শব্দের ব্যবহার করে বলা হয়নি, ইসলাম তো বিদেশি এই বইতে।’ তিনি আরও জানান যে এই পাঠ্যক্রমে ইউরোপ, আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও এশিয়ার আধুনিক ইতিহাস বই পড়ানোর কথা বলা হলেও ভারতীয় ইতিহাসের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে অনেক পুরনো বইয়ের উপরে। বইগুলি সমমানের নয়। সেই সঙ্গে হিন্দি বইয়ের উপরে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।‌ ‌

 

বাদ মুঘল ও আকবরের কথা

 

প্রস্তাবিত ইতিহাসের পাঠ্যক্রম অনেক শিক্ষককেই অবাক ও বিস্মিত করেছে, কারণ এই বইতে সম্রাট আকবর ও বৃহৎ মুঘল সাম্রাজ্য, যাঁদের রাজপুত ও মারাঠারা প্রতিরোধ করেছিল, তাদের কোনও কথাই উল্লেখ নেই। এটি সিন্ধু সভ্যতার পরিবর্তে ‘‌সিন্ধু সরস্বতী সভ্যতা’‌ শব্দটি ব্যবহার করেছে, বেদের উপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে, ‘‌ধর্ম এবং দর্শনের প্রতি ভারতীয় উপলব্ধি’‌ এবং ‘‌প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’‌ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বহু বিষয় বাদ ইতিহাস থেকে

‘‌দ্য মডিউল অন দ্য গ্লোরি অফ ইন্ডিয়ান লিটরেচার’‌ অংশটিতে ইউজিসি কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, কালিদাস, চরক সংহিতা বাদ গিয়েছে বলে অভিযোগ। ‘রেফারেন্স’ বইয়ের তালিকায় হিন্দি ভাষার প্রচুর বই রাখা হয়েছে। এই বইগুলো কাদের অনুমোদিত, উঠেছে সেই প্রশ্নও। ভারতের যোগাযোগের ইতিহাসে ‘‌নারদ, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, শঙ্কর, বিবেকানন্দ ও গান্ধী’‌-র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নামে বিভিন্ন হিন্দু তীর্থক্ষেত্র, হিন্দুদের ধর্মীয় মেলা, হিন্দুদের আচার-ব্যবহার, হিন্দুদের বিভিন্ন স্থাপত্যকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। নীতিশিক্ষার নামে রামায়ণ, মহাভারতের সঙ্গে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে পঞ্চতন্ত্র, জাতকের গল্পকে।

 

ইতিহাসকে ইচ্ছেমতো বদলেছে গেরুয়া শিবির

অধ্যাপক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‌যখন কেন্দ্রে বিজেপি প্রথমবার ক্ষমতায় এল (‌প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী)‌ তখন স্কুলের পাঠ্যক্রমকে কিছুটা পরিবর্তন করার চেষ্টা করে, কিন্তু এটা প্রথমবার কলেজের পাঠ্যবইকে গেরুয়া শিবির এভাবে বদল করার উদ্যোগ নেওয়া হল।’ তিনি এর সঙ্গে এও জানান যে রাজ্যগুলির জন্য এই পাঠ্যক্রম গ্রহণ করার‌ কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কিংশুক চট্টোপাধ্যায় এও জানান, শিক্ষকদের জন্য সবচেয়ে বড় বিরক্তিকর হল প্রতিটি পেপারের জন্য ‘‌প্রস্তাবিত পাঠ্য’‌ তালিকায় প্রচুর হিন্দি বই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইরফান হাবিব ও আর এস শর্মার মতো খ্যাতনামা ঐতিহাসিকদের বই সেখানে অন্তর্ভুক্ত নেই। হিন্দি বই সম্পূর্ণ অকেজো হিন্দি ভাষী নয় এমন রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে।

হিন্দি বইয়ের লেখকরা ঐতিহাসিক নন

রবীন্দ্র ভারতী ইউনিভার্সিটির শিক্ষক অধ্যাপক আশিষ দাসের গলাতেও শোনা গেল একই সুর। তিনি বলেন, ‘আপনি ইরফান হাবিবের ইতিহাস লেখার পদ্ধতির সঙ্গে একমত হতেও পারেন বা নাও হতে পারেন বা আপনি অন্য কোনও দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করতে চান, কিন্তু হিন্দি বইয়ের লেখকরা ঐতিহাসিক নন, তাঁরা বেশি করে পুরাণ পড়ে এসেছেন।’‌‌ তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিটিশ বাদে ভারতে আগত সকলেই ভারতীয় রীতি ও ঐতিহ্য গ্রহণ করেছে। সুলতান ও মুঘলরা যদি চাইতেন জোর করে ভারতীয়দের ধর্মান্তর করাতে , তারা পারতেন, কিন্তু তারা সেটা করেনি। কিন্তু এখন যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা গোটা অ্যাখানকেই বদলে দিতে চাইছে।’‌ ‌

এখন প্রশ্ন এই গেরুয়া শিবির কি রাজনীতিবিদ থেকে ইতিহাসবিদে পরিণত হয়েছে? মধ্যযুগের সমস্ত ইতিহাসকে সরিয়ে নতুন ঐতিহাসিক টাইমলাইন তৈরী করার যে অদ্ভুত পদক্ষেপ তা কি একবারও ভাবাচ্ছে না শাসক সম্প্রদায়কে যে শিক্ষাটা রসাতলে যাচ্ছে,ইতিহাস নামক যে দলিল তা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাচ্ছে? ভারতবর্ষ নানা ধর্মের দেশ। সেই দেশে মুসলিমদের বিদেশীও না,এলিয়েন বোধ হয়। ভারতে মুঘল শাসনের দীর্ঘ ইতিহাস কি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে জানা নিষ্প্রয়োজন? গীতা,ভাগবত,পুরাণ এমনকি পঞ্চতন্ত্রের রমরমা আছে,আছে হিন্দি গ্রন্থ লেখকদের গুচ্ছ গুচ্ছ নাম,নেই শুধু ইতিহাসটাই।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর