‘ধর্ষণ’ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা- লিখছেন রুমা পারভীনারা

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG_20201016_104604

“ধর্ষণ” বাংলা উচ্চারণ ও গঠনগত দিক থেকে ‘প্রত্যয়’ নিয়েই যুক্ত হয়েছে -‘ধৃষ্ + অন্’। ‘ধর্ষণ’ কথার অর্থ যৌন নির্যাতন। একজন ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃত যৌনসঙ্গম করার অর্থই হলো ধর্ষণ। শারীরিক নির্যাতনের সহিত নারীর কখনো কখনো জীবনহানিও ঘটে এই ধর্ষণ কথাটার অপ্রাপ্তিকর,কটুরসহীন শব্দটার পাশাপাশি নিপীড়নের মাধ্যমে। কিন্তু একটা বড় চ্যালেঞ্জের জায়গায় আজও বিদ্রুপের শীর্ষে উঠে গেল এই ধর্ষণ নামের পিছনে গড়ে ওঠা ব্যাকরণগত শব্দচয়নটি। কারণ ‘প্রত্যয়’ কথার অর্থ হল ‘বিশ্বাস’ আর সেখানে একটা নারী তার নিজের প্রতি সাহসিকতার, স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ানোর আত্মবিশ্বাস টুকু হারিয়ে ফেলছে শুধুমাত্র এই ইবোলা ভাইরাসের মত ‘ধর্ষণ’ নামক যৌন লালসা নির্লিপ্ত এক মারণ ‘কামনা ভাইরাস’।
এই ‘ধর্ষণ’ মানসিকতাযুক্ত কামনা মানুষকে বিশেষত পুরুষকে করে তুলেছে এক নৃশংস নরপশুর থেকেও অধম- অকাট্য মনোবিকলনসম্পন্ন। যেটার মাধ্যমে উন্মত্ত হয়ে ওঠা মানবিক সম্পন্ন ব্যক্তি সেই মুহূর্তে পরিণত হচ্ছে এক নর খাদকে। এই নরখাদকের মধ্যে আর থাকে না কোন শ্রেণীর, কোন জাত- পাতের, কোন দেশের ভেদাভেদ। যদিও সেই ধর্ষকের স্বীকার নারী কোন অজ্ঞান, কোন চেতনাহীন কিংবা কোন অপ্রাপ্ত বয়স্কা নারী। ধর্ষণের কাছে বলি হচ্ছে যুগ-যুগান্তরের বিভিন্ন অনিচ্ছাকারী, যৌন সংযমী নারী অর্থাৎ ধর্ষণের স্বীকারগ্রস্তি নারী।
আন্তর্জাতিক কোনও সংঘাত বা কোনও নিয়মতার-আচার, আবহে আবদ্ধ যুদ্ধেও বহুভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বা হয় আজও নারী। আর এই ধরনের অপরাধ হয়ে ওঠে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যদি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তাহলে ধর্ষণকে একটি গণহত্যা কাণ্ডের সঙ্গে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায় এই ধর্ষণকে। যেমন-ডেট ধর্ষণ,গণধর্ষণ, বৈবাহিক ধর্ষণ, উচ্চবর্ণের থেকে নিম্ন শ্রেণীর ধর্ষণ প্রভৃতি।
পূর্বপরিকল্পিত নিয়মমাফিক পরিচিত ব্যক্তিকে আমন্ত্রিত করে এনে ধর্ষণ করা। তাদের পরিচয় কখনো পারিবারিক আবদ্ধ করে তুলে তার পরেই তাকে ধর্ষণের শিকার করে তোলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ভিয়েতিম সেন্টার’ এর অভীক্ষা অনুযায়ী প্রতি চারজন নারীর একজন করে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে এই ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে শুধু নারীরাই। নারীর সৌন্দর্যকে, নারীর প্রতি আকর্ষণে খুবলে খাচ্ছে প্রতিটি নারীর শরীরকে ধর্ষকরূপী ওই হায়নার দল। হায়নার দল তার উন্নত মানসিকতাকে হারিয়ে ফেলে সেই মুহূর্তের হয়ে উঠছে ধর্ষণকারী – নরখাদকে।
আবার গণধর্ষণ বলতে বোঝানো হচ্ছে কোন নারীর উপর একইসঙ্গে বেশ কয়েকজন মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে অনিচ্ছাকৃত নারীর সমস্ত যৌন রসের ভান্ডার কে শুষে নেওয়ার জন্য নরখাদক। যৌন নির্যাতক ধর্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে ধর্ষণ করে আত্মসাৎ করে তার যৌনাঙ্গ, আত্মসাৎ করে সুস্থ মানসিকতাকে, আত্মসাৎ করে সচল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কে। ধর্ষণকারী নরখাদক এতটা হিংস্র রূপ ধারণ করে যে ধর্ষণের স্বীকার করে স্ত্রীযৌনাঙ্গের যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা, যৌনাঙ্গে মারণাস্ত্র ঢুকিয়ে দেওয়া।
বৈবাহিক ধর্ষণের স্বীকারগ্রস্তী নারীর সংখ্যাও কম নেই সমাজে। সেখানে দেখা যায় নারী ধর্ষিতা হচ্ছে কখনো পরিবারের পুরুষ দ্বারা আবার কখনো স্বামীর বন্ধুর মাধ্যমে। বিভিন্ন সমীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে এই ধরণের ধর্ষণের স্বীকার নারী অত্যধিক পরিমাণে মানসিক বিকারগ্রস্ততার পর্যায়ে পর্যবসিত হয়ে যায়।
আবার দেখা যাচ্ছে দলিত শ্রেণীর নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে উচ্চবর্ণের দ্বারা।কথায়, বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের মধ্যে যেন প্রমাণ দিতে চাইছে দলিত মানেই তার কাছে গণতান্ত্রিকতার,স্বাধীনতার অধিকারহীনতা।দলিত শ্রেণীর স্হান যেন উচ্চবর্ণের নরখাদকের শিষ্নের তলে।আর তাই যুগ যুগের ইতিহাসের পরিবর্তন না ঘটিয়ে সেটাকে বহমান করে নিয়ে এসেছে উচ্চবর্ণের হিংস্র যৌন লালসা কারী ধর্ষক বর্তমানের পিঁড়িতে। আর তারই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের ঘটনা কে চিহ্নিত করা যেতেই পারে।
নরখাদক হিংস্ররূপ ধারণ কারী ধর্ষক ভুলে যাচ্ছে তুলতুলে শিশুর নরম মাংসকেও ছাড়তে। চিবিয়ে খাচ্ছে তুলতুলে নরম শিশু কন্যার যৌনাঙ্গকে। ধর্ষণ করে যৌনাঙ্গে বসিয়ে দিচ্ছে ব্লেড।কিন্তু তারপরেও কামনার শেষ নিবৃতি করতে তার মুখ ইঁট দিয়ে থেঁতলে দিয়ে তার তৃপ্তি সাধন করে।মনে হয় তার শেষ রসটুকু তৃপ্তিভরে গ্রহণ করে নরমাংস ভক্ষণকারী ধর্ষক তার পূর্ণ পিশাচকারী পুরুষত্বকে ফোলাতে চায়।তাই ধর্ষকের মানসিকতাকে জলন্ত অগ্নি দগ্ধ করলেও যেন ধর্ষণের স্বীকার নারী শিশুর কলুষিতার নিস্তার মিলবে না।
কারাগারে ধর্ষিতা হচ্ছে নারী আসামী পুরুষদের থেকে। সেখানেও মিলছেনা নারীজাতির নিস্তার।
রাস্তার পাগলিটাকেও অন্তঃসত্ত্বা করে দিতে দ্বিধা করছে না ধর্ষকের শিষ্নের তাড়না।
প্রতিকার হিসেবে হয়তো সম্ভব হতো সাংবিধানিক রূপদান দিয়ে নতুন আইন তৈরি করে ধর্ষকের শিষ্নকে জলন্ত অগ্নি দগ্ধ করে ঝলসে দিলে, হয়তো নিস্তার মিলত ধর্ষণের যৌনকামনায় ছটফট করা ধর্ষকের শিষ্নকে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়ে।
প্রশ্ন থেকেই যায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাছে এরপরেও কি নিষ্কলঙ্ক মুক্ত হবে ধর্ষিতা নারীর কলুসিতা?
তাই ধর্ষিতা নারীর কন্ঠে সুর মিলিয়ে করজোড়ে অনুনয় স্বরচিত লেখনীর মাধ্যমে, উগরে আসা যন্ত্রণার নিস্ফল নিবেদন —
“ওরে নরপিশাচ ধর্ষকগণ,
বন্ধ কর তোর’ যৌন নির্যাতন!
শিষ্নটাকে বদ্ধ করে রাখ না,
তোর অন্দরমহলে।
নারীর পথচলাকে দিস না আর—
আতঙ্কিত করে।
দোহাই! তোর কাছে একটু চাই স্বস্তি।
তোরই মা বোন হয়ে।
দোহাই! তোর কাছে একটু স্বস্তি চাই।।”

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর