কৃষকদের সমস্যা সমাধানে সুপ্রিম কোর্টের গড়া কমিটি নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে যেসব কারণে

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

barandbench_2021-01_d1b163b0-6aa1-4be5-aa50-e43d0f58b566_farm_laws_02

সাইফুল্লা লস্কর : বিতর্কিত ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ২৬ শে নভেম্বর থেকে দিল্লি হরিয়ানা সীমান্তে শুরু হওয়া বিশাল কৃষক অবস্থান-বিক্ষোভ প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত। ৮ দফা কেন্দ্র এবং কৃষক প্রতিনিধিদের মাঝে আলোচনা হলেও মেলেনি কোনরকম রফা সূত্র। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্র সরকারের প্রণীত কৃষি আইন বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করল আজ। কৃষকদের সঙ্গে কেন্দ্রের আলোচনা ফলপ্রসূ করতে একটি কমিটি নিজস্ব উদ্যোগে গঠন করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ। এই কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে সুপ্রিম কোর্টের কাছে। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে আদৌ কি কৃষকদের সমস্যা সমাধান করে কৃষক আন্দোলন প্রত্যাহারে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা এই কমিটি গ্রহণ করতে পারবে কিনা। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞদের মতে এই কমিটি নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে কৃষকদের সমস্যার সমাধানে।

কেন এই কমিটি ব্যর্থ হবে তা জানার জন্য প্রথমেই জানা প্রয়োজন কমিটির চার সদস্যের কৃষক আন্দোলন এবং কৃষি আইনের ব্যাপারে অবস্থান সম্পর্কে। এই কমিটির প্রত্যেক সদস্য ইতিমধ্যেই এই বিতর্কিত আইনকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। দেখা যাক তাদের এই আইনের ব্যাপারে অবস্থান সম্পর্কে :

অশোক গুলাটি :

প্রথমে আসা যাক কৃষি অর্থনীতিবীদ অশোক গুলাটির কথায়। তিনি ইতিপূর্বে মোদি সরকারের আনা এই কৃষি আইনের সমর্থন করে জানিয়েছেন, এই আইন কৃষি বাজারকে সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এমনকি তিনি বলেছেন, ১৯৯১ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের প্রণীত যুগান্তকারী এলপিজি(LPG) ফর্মুলার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।

ভূপিন্দর সিং মান :

ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট বি এস মান খুব নগণ্য কয়েকজন কৃষক নেতাদের মধ্যে একজন যিনি কৃষক আইনের পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, “কৃষি বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য এইরকম সংস্কার অপরিহার্য।”
ইতিপূর্বে তিনি অল ইন্ডিয়া কিষান অর্ডিনেশন কমিটির নামে কয়েকটা কৃষক সংগঠন গড়ে তার পতাকা তলে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই আইন এর স্বপক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। ১৯৯০ সালে ভিপি সিং এর সরকার তাকে রাজ্যসভার সদস্য পদ দান করেছিল, যখন পাঞ্জাবে কৃষক আন্দোলন নিষিদ্ধ ছিল।

অনিল ঘানওয়াত :

মহারাষ্ট্র কেন্দ্রিক শেটকারী সংগঠনের নেতা আনিল ঘানওয়াত ইতিপূর্বে শুধু যে কৃষক আইনের সমর্থনে কথা বলেছেন তা নয় তিনি কৃষকদের এই আইন প্রত্যাহারের দাবির তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি পরবর্তীতে এই আইনের কিছু সংশোধনের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তের সমর্থন জানিয়েছেন। তার সঙ্গে বর্তমান ভারতের প্রধান বিচারপতি এস বোবদের খুব ভালো সম্পর্ক বলে শোনা যায়।

প্রমোদ যোশী :

ইন্টারন্যাশনাল ফুড এন্ড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর সদস্য প্রমোদ যোশী কেন্দ্র এবং কৃষক প্রতিনিধিদের মাঝে আলোচনার সময় কেন্দ্রের তথাকথিত ‘ইতিবাচক’ অবস্থানকে সমর্থন করেন। এই ব্যাপারে সরকারের নীতিকে সমর্থন জানিয়ে তিনি ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস সংবাদপত্রে একটি আর্টিকেল লিখেছিলেন। তিনি কৃষক আন্দোলনের নেতাদের কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবির বিরোধিতা করে কৃষক নেতারা বার বার নিজেদের মত পরিবর্তন করছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন।

সুতরাং আজ সুপ্রিম কোর্টের গড়া কমিটির সব সদস্যই কৃষক আন্দোলনের বিরোধী এবং কৃষি আইননের সমর্থক। সেই জন্য কৃষক আন্দোলনের নেতারা তাদেরকে যে মেনে নেবেন না সেটাই প্রত্যাশিত। কৃষক আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন এই কমিটি গঠন শুধুমাত্র তাদের সন্দেহকে বৃদ্ধি করবে। অল ইন্ডিয়া কিষান সংঘর্ষ কোঅর্ডিনেশন কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে,
এটা সুস্পষ্ট যে আদালতকে এই কমিটি গঠনের ব্যাপারে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এটা প্রকাশ্য যে এই কমিটির সদস্যগণ ইতিপূর্বে ৩ কৃষি আইনের জোরালো সমর্থন করেছেন।”

কৃষক অধিকার কর্মী রমন্দীপ সিং মান বলেছেন, ” আজ সুপ্রিম কোর্ট কৃষি আইনের ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করেছে যাতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন অশোক গুলাটি এবং বি এস মান যারা এই আইনের প্রকাশ্য সমর্থক। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা তাদের মেনে নেব না। আমরা তখনই ফিরে যাব যখন এই তিনটি বিতর্কিত আইন প্রত্যাহার করা হবে।” সুতরাং এই কমিটি যে ব্যর্থ হবে তা এক প্রকার নিশ্চিত।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর