এনবিটিভি:লকডাউনের জেরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকরা আটকে রয়েছেন। অনেকের খাওয়া হচ্ছে না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তারা বাড়ি ফেরার জন্য দেশবাসীর কাছে করুন প্রার্থনা করছেন। কিন্তু কোনভাবেই তারা বাড়ি আসতে পারছে না।তাই পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন অল ইন্ডিয়া সুন্নাত ওয়াল জামাতের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুফতি আব্দুল মাতিন। মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠির কপি নিচে তুলে ধরা হলো…
To
Mamata Banerjee
Hon`ble Chief Minister (W.B)
Nabanna (14th Floor)
325, Sarat Chatterjee Road, Shibpur, Howrah- 711102
বিষয়- বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনার আবেদন।
Coronavirus (Covid-19) প্রতিরোধে আপনার পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। আপনি নিশ্চয় জানেন, লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা। আবার শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে যারা বাংলার বাইরে দেশের অন্যান্য রাজ্যে কাজকর্ম করেন তারা আরো বেশি বিপদাপন্ন অবস্থায় কাল যাপন করছেন। দেশীয় শ্রমিকদের তুলনায় প্রবাসী বাঙালি শ্রমিকরা খুববেশি কষ্টের মধ্যে পড়ে আছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েক হাজার প্রবাসী বাঙালীদের সাথে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ করে তাদের দুর্ভোগের কথা জানতে পারি। আমার জানা কিছু দুর্ভোগের নমুনা পেশ করছি-
1. দীর্ঘদিন কাজকর্ম বন্ধ থাকায় তারা অর্থ শূন্য হয়ে পড়েছেন। নিজের পয়সা দিয়ে কিছু কিনে খাবেন এমন পয়সাও অনেকের কাছে আর নেই।
2. যে মহাজনের কাছে তারা কাজ করত সে মহাজন পাওনা টাকা না দিয়ে পালিয়ে গেছে। ফলে ভিখারির চেয়েও এখন করুন অবস্থা তাদের।
3. যে ঘরে তারা ভাড়া থাকে লকডাউন চলাকালীন ঘর ভাড়ার জন্য চাপ দেওয়া যাবে না, এই আইন অগ্রাহ্য করে বেআইনি ভাবে ঘর মালিক তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছে। অনেকে নিজেদের জামা কাপড় মোবাইল ইত্যাদি বিক্রি করে ঘর ভাড়া দিচ্ছেন। আবার অনেকে ভাড়া দিতে না পারলে ঘর মালিক তাদের বিদ্যুত, পানি বন্ধ করে দিচ্ছে। আবার কখনো কখনো ঘর থেকে বের করেও দিচ্ছে।
4. প্রবাসীদের জন্য স্থানীয় সরকার যে খাবারের ব্যবস্থা করেছে সে খাবার তারা ঠিক মতো পাচ্ছেন না। কখনো খাবার মিললেও সঙ্গে পুলিশের বেধড়ক রুলও মিলছে। আবার কখনো দু তিন ঘন্টা লাইনে থেকেও খাবার মিলছে না। খাবার নেওয়ার প্রতিযোগিতায় প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে করোনা সংক্রামক হওয়ার আশংকাও প্রবল। এমন অবস্থায় তাদের অনেকের অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
5. দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে তাদের পরিবারের লোকজনও অস্থির হয়ে পড়ছেন। একদিকে সাংসারিক অভাবের মানসিক অশান্তি, অপরদিকে প্রবাসে না খেয়ে থাকা প্রিয়জনের ফোন কলে কান্নার আওয়াজ শুনে শুনে তারা অসম্ভব রকমের যন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন।
6. তাদের এই সংকট কালে বাড়ির থেকে পরিবারের লোকজন যে কিছু টাকা পয়সা পাঠাবে পরিবারের সদস্যদের এমন আর্থিক স্বচ্ছলতাও নেই। বাড়িতে দু মুঠো ডাল ভাত যোগাড় করতে যারা হিমসিম খাচ্ছেন তারা প্রবাসী প্রিয়জনের জন্য টাকা পাঠাবে কি করে? আসলে যে ছেলের পাঠানো টাকায় বৃদ্ধ পিতা-মাতার সংসার চলে, আজকে সেই ছেলের জন্য টাকা পাঠানো বৃদ্ধ পিতা মাতার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।
7. সর্বোপরি বাঙালী হওয়ার কারণে স্থানীয় অবাঙালিদের দ্বারা এই দুঃসময়েও কারণে অকারণে প্রতিনিয়ত বাঙালী শ্রমিকরা নির্যাতিত হচ্ছেন।
আমার মনে হয় আগামী এক আধ সপ্তাহের মধ্যে তাদের ঘরে ফেরাতে না পারলে অনেক শ্রমিক না খেয়ে মরেও যেতে পারেন বা অন্য কোনো ছোট বড় দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
অতএব মহাশয়া, আপনার কাছে আমার সকরুণ আবেদন যেকোনো উপায়ে বাঙালী পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে শুরু করে আপনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য থাকবেন। আমার সংগঠন অল ইণ্ডিয়া সুন্নাত অল জামায়াত পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আপনার কথা মত যেকোনো রকম দয়িত্ব পালন করবে। আপনার একান্ত প্রচেষ্টায় প্রবাসী শ্রমিকরা ঘরে ফিরতে পারবে বলে আমি আশাবাদী। তারা ঘরে ফিরতে পারলে কয়েক লক্ষ বাঙালি শ্রমিকদের পাশাপাশি পুরো বাঙালী সমাজ আপনার কাছে চীর কৃতজ্ঞ থাকবে। আশাকরি মহাশয়ার সমীপে আমার এই করুন আবেদন সানন্দে গৃহীত হবে।
বিনীত- আব্দুল মাতিন
সম্পাদক- অল ইন্ডিয়া সুন্নাত অল জামায়াত