এক আলোকবর্তিকার মৃত্যুতে খুঁজে পাওয়া তাঁর আলোর নিশান

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। একটা পিছিয়ে পরা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষার চেয়ে বড় মাধ্যম আর কিছু হয়না। এই শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বহু মানুষ তাঁর শেষ রক্তবিন্দুটুকু দিয়ে লড়ে গিয়েছেন। সে বিদ্যাসাগর থেকে শুরু করে,বেগম রোকেয়া হোক বা আজকের শিক্ষারত্ন পাওয়া শিক্ষকেরা। ইতিহাস তাঁর সাক্ষী আছে। ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়না এমন অনেক লড়াই রয়ে যায় আমাদের আশেপাশে। সমাজের তাগিদে সেইসব কাহিনী খুঁজে নিতে হয় আমাদেরই। আজ আপনাদের জন্য আমরা খুঁজে এনেছি তেমন এক কাহিনী। এক মৃত্যুর খবরের অতলে যেতেই খোঁজ পেয়েছি এই কাহিনীর।

গত ২৩শে সেপ্টেম্বর ,বৃহস্পতিবার,বেলা ১০টা। আমাদের কাছে খবর এসে পৌছায় যে দক্ষিন ২৪ পরগনার এক মহান শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে, যিনি ঘুটিয়ারি শরীফ চক্রের একটি গোটা বিদ্যালয় গড়ে ওঠার অন্যতম ব্যক্তি। আমাদের NBTV র টীম পৌঁছেছিলো সেখানে। মৃত শিক্ষকের নাম আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা। মৃত্যুকালীন বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি দক্ষিন ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি শরীফ চক্রের শ্রীনগর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক। শ্রীনগর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিত গড়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক মোল্লাসহ আরও ৩ জন।

সালটা ১৯৬৪। চার বন্ধুতে মিলে শিক্ষা দেওয়ার আশা নিয়ে বাঁধে ১টা মাটির ঘর,টালির চালা। যাতায়াতের জন্য ১টা গ্রামের জমির উপর দিয়ে তৈরি করা হয় রাস্তা। স্কুলটা সোজা হয়ে দাঁড়ানোর আগে প্রায় ১০ থেকে ১২ বার ভেঙ্গে পরে । আবারো মাটি মেখে নিজে হাতে সেই স্কুলকে মাথা তুলে দাঁড় করিয়ে দেন এই চার মহান আত্মা। তাঁরা হলেন আব্দুল হামিদ মল্লা,আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা,সাজাহান জমাদার ও ফারুক জিন্না।

১৯৭১ সাল। সরকারিভাবে অনুমোদন পায় শ্রীনগর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। আব্দুল হামিদ মোল্লা হন প্রধান শিক্ষক। তখন তাদের মাসিক মাইনে মাত্র ১৬৫ টাকা। ছাত্র ছিল মাত্র ৪০জন। আজ প্রায় ৫০বছর পর সেই স্কুল গ্রামের শিশুদের শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থল। ৫০ বছর পর ৪ থেকে তাঁরা ৩ হলেন। পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করতে করতে আমাদের সঙ্গে কথা বললেন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক আব্দুল হামিদ মোল্লা ও সাজাহান জমাদার এবং স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে এস আই অফিসে চাকুরীরত গোলাম মাওলা পুরকাইত।

তাঁর মৃত্যুতে গ্রামে ভিড় উপছে পড়েছে। জানাজাতে নেমেছে তাঁর অসংখ্য ছাত্রের ঢল। কথায় আছে,মহান আত্মার মৃত্যু হয়না। তাঁরা বেঁচে থাকেন তাদের কাজের মাধ্যমে। মহান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা বেঁচে থাকবেন তাঁর স্কুল,ছাত্রছাত্রী আর বন্ধু ও পরিবারের মধ্যে।

Latest articles

Related articles