Sunday, May 25, 2025
29 C
Kolkata

স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের ২৬ হাজার নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের, ৭ হাজারকে ফেরত দিতে হবে বেতন

পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) ২০১৬ সালের সমস্ত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে সামান্য সংশোধন করে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ২৫,৭৫২ জনের চাকরি বাতিল হবে। এর মধ্যে প্রায় ৭,০০০ জনকে চাকরির সময় পাওয়া সমস্ত বেতন ফেরত দিতে হবে। আদালতের মতে, এই ৭,০০০ জনই ছিলেন “দাগী” বা “অযোগ্য” প্রার্থী, যাদের নিয়োগ দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছিল।

কারা এই ৭,০০০ “দাগী” চাকরী প্রার্থী?
সিবিআইয়ের তদন্তে এসএসসি স্ক্যান্ডালে তিন ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে:
১. সাদা খাতা জমা: বহু প্রার্থী কোনো উত্তর না লিখে খালি খাতা জমা দিয়েও পাস করে চাকরি পেয়েছিলেন।
২. প্যানেলের বাইরে থেকে নিয়োগ: এসএসসির অনুমোদিত প্যানেলের তালিকায় নেই এমন প্রার্থীদের নাম ঢুকিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছিল।
৩. মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল: প্যানেলের বৈধ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্টের মতে, এই তিন গ্রুপের প্রার্থীরা প্রতারণামূলক উপায়ে চাকরি পেয়েছেন। তাই তাদের চাকরি বাতিলের পাশাপাশি আদালত বেতন ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ বলেছেন, “দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের রক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই।”

যাদের বেতন ফেরত দিতে হবে না:
প্রায় ১৯,০০০ প্রার্থীকে “যোগ্য” বা “অযোগ্য” বলে চিহ্নিত করা যায়নি, কারণ পরীক্ষার উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, তাদের চাকরি বাতিল হলেও বেতন ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আদালতের মতে, সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াই সংবিধানের ১৪ ও ১৬ নম্বর ধারা (সমতা ও সরকারি চাকরিতে সুযোগের নিশ্চয়তা) লঙ্ঘন করেছিল। তাই সামগ্রিক বাতিলের সিদ্ধান্ত ন্যায্য।

এসএসসি কেলেঙ্কারির পর রাজ্য সরকার অপেক্ষমাণ তালিকার প্রার্থীদের জন্য অতিরিক্ত পদ (সুপারনিউমেরি পোস্ট) তৈরি করেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই পদ তৈরির প্রক্রিয়াও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্য সরকার এই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলেও, শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে আলাদা শুনানির কথা বলেছে। আগামী ৮ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। মামলাকারীর আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তের অভিযোগ, “দুর্নীতিকে ঢাকতে অস্বাভাবিক ভাবে অতিরিক্ত পদ তৈরি করা হয়েছে।”

এই রায়ের ফলে প্রায় ২৬ হাজার পরিবারে আর্থিক ও মানসিক সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যে চাকরিচ্যুত হওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। রাজ্য সরকার এখনও এই রায় নিয়ে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করেনি।

Hot this week

ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলন, বন্ধ জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ

জাতীয় সড়ক ১১৬এ-র কাজ বন্ধ হয়ে গেল পূর্ব বর্ধমানের...

মালদার এক নার্সিংহোমে মৃত্যুর পরেও চিকিৎসা চলল সাকিরুল ইসলামের, মৃত ব্যক্তিকে নিয়েও ঘৃণ্য ব্যবসা

মালদার কালিয়াচকের নার্সিংহোম কাণ্ডে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। মৃত্যুর...

বিজেপি নেতাদের লাগাতার বিতর্ক—গণতন্ত্রে শৃঙ্খলার সংকট ?

রাজনৈতিক মহলে ফের উত্তাল বিতর্ক। একদিকে রাজস্থান বিধানসভার বিজেপি...

গ্রুপ-সি নিয়োগে নাম থাকা সত্ত্বেও নম্বর কম! মুখ্যমন্ত্রীর ভাইঝির চাকরি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। সাম্প্রতিক...

Topics

মালদার এক নার্সিংহোমে মৃত্যুর পরেও চিকিৎসা চলল সাকিরুল ইসলামের, মৃত ব্যক্তিকে নিয়েও ঘৃণ্য ব্যবসা

মালদার কালিয়াচকের নার্সিংহোম কাণ্ডে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। মৃত্যুর...

বিজেপি নেতাদের লাগাতার বিতর্ক—গণতন্ত্রে শৃঙ্খলার সংকট ?

রাজনৈতিক মহলে ফের উত্তাল বিতর্ক। একদিকে রাজস্থান বিধানসভার বিজেপি...

মালদার লক্ষ্মীপুর এলাকায় নির্মাণাধীন জলাধারে দুর্ঘটনা, পা ফসকে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারালেন এক শ্রমিক

মালদার মানিকচকের এনায়েতপুরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় একটি নির্মাণাধীন জলাধারে কাজ...

Related Articles

Popular Categories