
রামনবমীর ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে এবার পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির মধ্যে লড়াইয়ে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। গত কয়েক বছরের তুলনায় তৃণমূল নেতাদের রামনবমী উদযাপনের তীব্রতা ও প্রকাশ্য ধর্মীয় প্রতীকী রাজনীতিকে বিজেপি-আরএসএসের ‘হিন্দু এজেন্ডা’ কৌশলের অনুকরণ হিসাবেই দেখছেন রাজনৈতিকবিশ্লেষকরা। রবিবার রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে স্থানীয় নেতারা—কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, কুণাল ঘোষ—সকলেই মন্দিরে পুজো, মিছিল ও ধর্মীয় শোভাযাত্রায় সামিল হয়ে বার্তা দিলেন: “তৃণমূলই হিন্দু সমাজের ‘আসল প্রতিনিধি'”।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রামনবমীর প্রাক্কালে টুইট করে লিখেছেন, “সবাইকে রামনবমীর শুভেচ্ছা। শান্তি বজায় রেখে উৎসব পালন করুন।” কিন্তু মাঠে নেতাদের কর্মসূচিতে ‘শান্তি’র চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে ধর্মীয় উৎসবের রাজনৈতিক মেরুকরণ। কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ থেকে পুরুলিয়া—তৃণমূল নেতারা রাম মন্দির, হনুমান মন্দিরে পুজো দেওয়া, বিশাল কাটআউট মিছিল এবং ‘ধর্মীয় সংস্কৃতি’র নামে শোভাযাত্রা করে দেখিয়েছেন, তৃনমূল কংগ্রেস বিজেপিরই আরেক রূপ।

- শশী পাঁজার ‘মন্দির ট্যুর’: নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বাগবাজারের হনুমান মন্দির ও শীতলা মন্দিরে পুজো দিয়ে সরাসরি বিজেপিকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “রামনবমী নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করছে বিজেপি।” কিন্তু স্বয়ং মন্ত্রীর মন্দিরে ধর্মীয় প্রতীকী উপস্থিতি প্রশ্ন তুলেছে: তৃণমূল কি ‘সেকুলারিজম’ ছেড়ে ‘হিন্দু ইমেজ’ বানাচ্ছে?
- *
- চুঁচুড়া থেকে ক্যানিং: রাম-রবীন্দ্র মিশ্রণ: চুঁচুড়ায় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের নেতৃত্বে রামনবমীর মিছিলে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নাম সংকীর্তনের মিশ্রণে ‘বাংলার হিন্দুত্ব’ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অন্যদিকে, ক্যানিংয়ের তৃণমূল বিধায়ক সওকত মোল্লা মিছিলে সাঁওতালি নাচ ও মাদল বাজিয়ে আদিবাসী-হিন্দু ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন—যা আরএসএসের ‘সামগ্রিক সমাজ’ কৌশলেরই প্রতিধ্বনি।
- শিলিগুড়ি থেকে সিউড়ি: ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নেতাদের হিন্দু থিম: শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব সত্যনারায়ণ মন্দির থেকে রামকৃষ্ণ মিশন পর্যন্ত পুজো-অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে, রাতে বাড়িতে নারায়ণ পুজোর আয়োজন করেছেন। সিউড়িতে তৃণমূলের মিছিলে রামের বিশাল কাটআউটের পাশাপাশি মনীষীদের ছবি তুলে ধরা হয়েছে—একদিকে ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’-এর মিশ্রণ।

‘ তৃনমূলের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশে হিন্দুত্ব?’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূলের এই ‘হিন্দু থিম’ উদযাপন আরএসএস চাপে ‘সফট হিন্দুত্ব’ কৌশলের অংশ। গত কয়েক বছরে রাজ্যে
সাম্প্রদায়িকতার উত্থান, হিন্দু ভোট ব্যাংক বাড়াতে তৃণমূল নেতৃত্ব ধর্মীয় উৎসবকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাচ্ছে।
রামনবমীর ধর্মীয় উৎসবকে ‘সাংস্কৃতিক উদযাপন’ বলে চালালেও, তৃণমূল নেতাদের মিছিল-মন্দির-প্রতীকী রাজনীতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে- আরএসএস-এর হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে করতে গিয়েই তৃণমূল এখন আরএসএস-স্টাইলে প্রোপাগান্ডায় মত্ত। প্রশ্ন উঠছে: ধর্মনিরপেক্ষতার পতাকাবাহী দলটি কি শেষ পর্যন্ত হিন্দু জাতীয়তাবাদের খেলায় যোগ দিল?