চাষ জমি ও বাগানের পর সামশেরগঞ্জ ধানঘরা গ্রামকে গিলতে চলেছে পদ্মা

এনবিটিভি ডেস্ক : রাজ্যের মধ্যে এই মুহূর্তে সবথেকে বড় আতঙ্কের খবর হলো পদ্মার ভাঙ্গনের কবলে আস্ত একটি গ্রাম। মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ ব্লকের ধানঘরা গ্রামের ঘটনা। সম্পূর্ণ সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাসকারী এই গ্রামে পাঁচশোর বেশি ঘর রয়েছে। চাষ জমি ও বাগান খেয়ে নেওয়ার পর একশোর মতো ঘর চলে গিয়েছে নদীর গর্ভে। আরো শতাধিক ঘর আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঝুলে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে এই ঘর গুলি ভাঙ্গনের জেরে নদীতে তলিয়ে যাবে। এই অবস্থায় চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে দিন যাপন করছেন ধানঘরা গ্রামের বাসিন্দারা।

ক্ষতিগ্রস্ত ধানঘরা গ্রামে বাসিন্দা ফয়েজ উদ্দিন শেখ জানান, পদ্মার এই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে দিন পনেরো আগে। প্রথমে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে শেষ হয়ে যায় চাষযোগ্য জমি। প্রায় ৫০ বিঘা চাষের জমি তলিয়ে গিয়েছে পদ্মায়। এছাড়াও রয়েছে লিচু ও আমের বাগান। ১০ বিঘা এলাকাজুড়ে আমের বাগান ভাঙ্গনের কবলে নদীর তলায়। তারপর ধানঘরা গ্রামকে গিলতে এগিয়ে আসে পদ্মার ভাঙ্গন। ৫০০ ঘরের মধ্যে ১০০ ঘর ইতিমধ্যেই নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। সেই সমস্ত ঘরের সদস্যরা বাঁচার তাগিদে নিজেরাই আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্রে।কেউ ত্রিপল খাটিয়ে খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ আবার আত্মীয়র বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কয়েকটি পরিবার স্থানীয় সরকারি স্কুলগুলিতে থাকতে শুরু করেছেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই, পদ্মার ভাঙ্গন রোধ করা যাচ্ছে না। সামসেরগঞ্জ ব্লক এর বিডিও, ভাঙ্গন প্রসঙ্গে বলেন, সেচ দপ্তরে খবর দেওয়া হয়েছে। ভাঙ্গন রোধ করার প্রসঙ্গে যা করার সেচ দপ্তর করবে। বিডিও খবর দিলেও, ১৫ দিন ধরে চলা এই ভাঙ্গন রোধ করতে সরকারের তরফে এখনো জোরালো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, কিছু কিছু জায়গায় বাঁশ দিয়ে গার্ডওয়াল তৈরি করা চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু, প্রতিদিন দিনে দুবার করে পদ্মার ভাঙ্গন এর যে গতি, তাতে প্রশাসনের উদ্যোগে অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। চাষের জমি থেকে বাগান, তারপর একটি গ্রাম যখন নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে, তা দেখেও সরকারের তরফে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। চোখের সামনে তিল তিল করে গড়ে তোলা ঘরবাড়ি যখন নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে, তা দেখে চোখের জল আটকাতে পাচ্ছেন না সোলেমান, রহিমা বিবি, ফয়েজ উদ্দিন, শামসুল হকেরা।
যদিও এ বিষয়ে বিডিও জানিয়েছেন, যাদের বাড়ি ক্ষতি হয়েছে বা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে চিঠি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলিকে ত্রিপল, শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

স্থানীয় বিধায়ক আমিরুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা করে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন৷

উল্লেখ্য, এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই শ্রমিক শ্রেণীর। যার মধ্যে অধিকাংশ মানুষ বিড়ি শ্রমিক। শ্রমিকের কাজ করে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিল বাসস্থান। আজ এক নিমেষে তলিয়ে গেল পদ্মায়। ক্ষতিগ্রস্ত ধানঘরা গ্রামের বাসিন্দা রহমত আলী শেখ বলেন পদ্মার ভাঙন রোধের জন্য আমরা প্রতিবছরই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু কখনোই প্রশাসন আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। ভাঙন রোধ করার জন্য কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সরকারের উদাসীনতার কারণেই, আজ আমাদের নিরাশ্রয় হতে হয়েছে।

Latest articles

Related articles