
১৬ মার্চ, ২০২৫: গুজরাটের আম্রেলি জেলার ভারত নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই মুসলিম শিশুকন্যা জয়নাব* (৮) ও সাফিনা* (১০)-এর ওপর শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। নারী দিবসের ঠিক আগে ৮ মার্চ সপ্তাহজুড়ে দেশজুড়ে নারীশক্তির জয়গান চললেও এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে সমাজের বৈপরীত্য নিয়ে। পরিবারের সদস্যরা একদিন জয়নাবকে কোণে বসে কাঁদতে দেখে তদন্তে জানতে পারেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহেন্দ্র পটেল টানা আট দিন ধরে শিশু দুটির সঙ্গে যৌন সহিংসতা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ।
জয়নাবের ভাই বলেন, “তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী, আমার বোনের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অমানবিক। আমরা ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারিনি, কিন্তু ন্যায়ের লড়াইয়ে নামবই।” অভিযুক্ত শিক্ষক মহেন্দ্র পূর্বেও শারীরিক নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন, কিন্তু আরএসএসের যোগাযোগ ও হিন্দু পরিচয়ের কারণে পার পেয়ে যান বলে দাবি পরিবারগুলোর। শিশুদের মদপান করতে বাধ্য করা, পানির বোতলে মদ মিশিয়ে দেওয়া, এমনকি মদকে “রোগের ওষুধ” বলে প্রচার করারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
জয়নাবের চাচা জানান, “ন্যায় পাওয়ার পথে বাধা তৈরি করা হচ্ছে, কারণ অভিযুক্ত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তিনি আমাদের মেয়েকে চেপে যেতে ভয়ও দেখিয়েছেন।” সাফিনার বাবা আক্রান্ত হয়ে নীরব থাকলেও তার চাচার বক্তব্য, স্কুলের সব শিক্ষার্থী মুসলিম—এ ঘটনা সম্প্রদায়িক বিদ্বেষেরই ফল। তিনি বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা নেই, কিন্তু অন্যায় চোখে দেখব না।”

মসজিদের পিছনে অবস্থিত এই স্কুলে মাত্র দুজন শিক্ষক থাকায় নজরদারির অভাব রয়েছে বলে স্থানীয় মুসলিমরা মনে করছেন। অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার উন্নয়নে উদাসীন। দীর্ঘদিন ধরে মহেন্দ্রের অসদাচরণ চললেও প্রাচীরঘেরা পরিবেশে তা ধরা পড়েনি।
শিশুদের গায়ে মদের গন্ধ পেয়ে সন্দিহান অভিভাবকেরা পরিকল্পনা করে স্কুলে হানা দেন। স্থানীয় সাংবাদিক রফিকের দাবি, “দরজা খুলেই লোকজন মহেন্দ্রকে অশালীন কাজে লিপ্ত দেখে।” তবে, পুলিশ ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট এফআইআর-এ অভিযুক্তের ধর্মীয় পরিচয়কে কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। জয়নাবের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।
মহেন্দ্র বিজেপি নেতা ও রাজকোটের সাংসদ পার্শোত্তম খোদাভাই রুপালার ভাগ্নে বলে দাবি করা হয়। পটেল সম্প্রদায় ও হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি তার পক্ষে এগিয়ে এলেও স্থানীয় মুসলিমরা বিক্ষোভে সামিল হন। দারুল উলুম মেহবুবিয়ার নেতৃত্বে আম্রেলির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিচারের দাবিতে চিঠি দেন। স্কুলের অপর শিক্ষকও প্রতিবাদে যোগ দেন।

প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়্যাল অফেন্সেস (পকসো) আইনে মামলা হলেও কর্মী মুজাহিদ নাফিসের মতে, “এখানে বিদ্বেষের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। পুলিশের গড়িমসি ও ক্ষমতাসীনদের যোগাযোগ তদন্তের দাবি রাখে।” ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি দ্রুত বিচার ও তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে।
এই ঘটনা গুজরাটের উন্নয়নের দাবিকে প্রশ্নের মুখে ঠেকিয়েছে। মুসলিম পরিবারগুলির মধ্যে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও রাজনৈতিক শক্তির যোগাযোগ—সব মিলিয়ে এ মামলা হয়ে উঠেছে সমাজের অন্ধকার দিকের প্রতিচ্ছবি।
( গোপনীয়তা রক্ষার্থে নিপীড়িতদের *নাম পরিবর্তন করা হয়েছে)