রাজনৈতিক মহলে ফের উত্তাল বিতর্ক। একদিকে রাজস্থান বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক কানওয়ার লাল মীনার বিধায়ক পদ খারিজ, অন্যদিকে দিল্লি-মুম্বই হাইওয়ের উপর মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা মনোহর লাল ধাকারের কুরুচিকর ভিডিও—এই দুই ঘটনায় ভারতীয় রাজনীতির শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার প্রশ্ন ফের উঠে এসেছে।
রাজস্থানের কানওয়ার লাল মীনা সম্প্রতি এক সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের দিকে বন্দুক তাক করার অপরাধে তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আদালতের এই রায়ের পরই তাঁর বিধায়ক পদ বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই ঘটনায় তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলেও শীর্ষ আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে তাঁকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী, ২১ মে ঝালওয়ার জেলার মনোহর থানা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মীনা। বর্তমানে তিনি জেলে রয়েছেন। একজন জননির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এমন আচরণ গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির পরিপন্থী—এমনই প্রতিক্রিয়া মিলছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছ থেকে।

অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা মনোহর লাল ধাকারের বিরুদ্ধে উঠেছে আরও গুরুতর অভিযোগ। দিল্লি-মুম্বই হাইওয়ের একপ্রান্তে তাঁর অশ্লীল কার্যকলাপের একটি ভিডিও সম্প্রতি এক্স (পূর্বতন টুইটার) প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই সর্বস্তরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। দলীয়ভাবে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না মিললেও বিজেপির অভ্যন্তরে চাপা অসন্তোষ স্পষ্ট। অনেকেই মনে করছেন, এমন কুরুচিকর আচরণ শুধুমাত্র ব্যক্তি নয়, গোটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।
এই দুই ঘটনা যথাক্রমে আইনবিরোধী হিংসাত্মক আচরণ এবং ব্যক্তিগত চরিত্রগত বিচ্যুতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। উভয় ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন দলের সদস্য হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে—দলীয় শৃঙ্খলা, নৈতিকতা এবং জনদায়িত্বের আদর্শ আদৌ কতটা বজায় রাখা হচ্ছে? বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ইতিমধ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনায় মুখর, এই ঘটনাগুলিকে তারা “ক্ষমতার দম্ভ” এবং “নৈতিক অধঃপতনের” প্রতিচ্ছবি হিসেবে তুলে ধরছে।

ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় জনপ্রতিনিধিদের নৈতিকতা ও আচরণ শুধুমাত্র তাঁদের ব্যক্তি জীবনের বিষয় নয়, বরং তা বৃহত্তর সমাজের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। আইন মেনে চলা, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং জনসাধারণের সামনে একটি উচ্চতর আদর্শ স্থাপন করাই এক জননেতার প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমানভাবে এমন ঘটনাগুলি সামনে আসছে, যা রাজনীতিকে কলুষিত করছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হ্রাস করছে।
এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলির উচিত নিজেদের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার মানদণ্ডকে আরও কঠোর করা এবং প্রয়োজনে দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আইন ও সংবিধান সকলের উপরে—এই বার্তা আরও শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠা করাই ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।
পরিশেষে, এই প্রশ্নটি ওঠাই স্বাভাবিক—আমরা কি এক এমন সময়ের দিকে এগোচ্ছি যেখানে জনপ্রতিনিধিদের আচরণ বারবার আইন এবং নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করে? নাকি এখনই সময়, রাজনীতি ও জনজীবনের মধ্যে পুনরায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সাহসী প্রয়াসের? সময়ই সেই উত্তর দেবে।