হাওড়া, সাঁকরাইল: রামনবমীর প্রাক্কালে হাওড়ার সাঁকরাইল এলাকায় কলকাতা হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশিকা উপেক্ষা করে তরোয়াল, কাটারি ও দাঁ হাঁসুয়া সহ ধাতব অস্ত্র হাতে বিতর্কিত মিছিলের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গন। শনিবার স্থানীয় রামনবমী পালন কমিটির আয়োজনে রাজগঞ্জে এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী যুবকদের অস্ত্র হাতে নাচার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যদিও পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি ও মোতায়েনের কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করা গেছে বলে জানানো হয়েছে।

গত ২৪ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ হাওড়ার দুটি ও কলকাতার একটি মিছিলে ধাতব অস্ত্র ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। আদেশে উল্লেখ করা হয়, “রামনবমীর মিছিলে ধাতব অস্ত্র বহন করা যাবে না, ঐতিহ্যের নামে আইন ভাঙার সুযোগ নেই।” তবে হাওড়া পুলিশ সূত্রে দাবি, স্থানীয় হিন্দু সংগঠন ‘সিংহবাহিনী’র উদ্যোগে এই মিছিলের জন্য অস্ত্র বহনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে প্রশাসন।

মিছিলের আয়োজকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, “এটি আমাদের বহু বছরের প্রথা। এক হাতে শাস্ত্র, অন্য হাতে অস্ত্র—হিন্দু সংস্কৃতির অংশ। আমরা কাউকে অস্ত্র নিতে বাধ্য করিনি।” স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দশক ধরে রামনবমী উপলক্ষে এই অঞ্চলে অস্ত্র সহ মিছিলের রীতি রয়েছে। তবে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশিকা ও নিরাপত্তা প্রটোকলকে এই প্রথম সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা হলো।

রামনবমীকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানানো হয়েছে, আগাম তথ্যের ভিত্তিতে মিছিলের স্থানে ক্রাশার, জলকামান ও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল। কোনো হিংসার ঘটনা না ঘটলেও অস্ত্রের ব্যবহারের ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় প্রশাসনিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে।

পুলিশের একটি বর্ধিত রিপোর্ট অনুযায়ী, মিছিলে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি আসল নাকি নকল, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আরও উন্নততর সুরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে আগামী কয়েকদিন এলাকায় কঠোর নজরদারি চলবে বলেও জানানো হয়েছে। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘনের দায়ে সংগঠনের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ধারা ১৪৪ বা অস্ত্র আইনে মামলা হতে পারে।
রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র নিয়ে চলমান এই বিতর্ক রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় রাজনীতির সংঘাতের নতুন মাত্রা যোগ করল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।