
বীরভূমের সিউড়িতে রামনবমীর মিছিলে রাজনীতির নতুন সমীকরণ! একদিকে বিজেপির শোভাযাত্রা, অন্যদিকে তৃণমূলের “রামভক্তি” প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। তৃণমূল নেতৃত্বের হনুমান মন্দির পর্যন্ত মিছিলে শামিল হয়েছিলেন বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীসহ দলের বড় নেতারা। কিন্তু এই উৎসবের আবহে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক ‘ডাবল গেম’ নিয়ে!
গত কয়েকদিন আগেই সংসদে ওয়াকফ বিলের ভোটাভুটির দিনে শতাব্দী রায়ের অনুপস্থিতি নিয়ে তৃণমূল দাবি করেছিল, তিনি “ভীষণ অসুস্থ”। ডায়রিয়ার কথা বলে সংসদে না গিয়ে বিল পাসে পরোক্ষভাবে বিজেপিকে সহায়তা করার অভিযোগ ওঠে বিরোধীদের তরফে। কিন্তু রামনবমীর দিনেই সেই শতাব্দী রোজ কড়া রোদে মিছিলে হাঁটলেন, স্যালাইন নিয়ে! প্রশ্ন: ভোটের দিনে এয়ারকন্ডিশনড সংসদ ভবনে যাওয়া কি রোদে হাঁটার চেয়েও কঠিন ছিল?
বিরোধী মহলের দাবি, তৃণমূল আসলে সংখ্যালঘুদের মুখে ‘সেকুলারিজম’ এর মধুর বুলি আওড়ালেও, গোপনে আরএসএস-বিজেপির এজেন্ডাকেই এগিয়ে দিচ্ছে। ওয়াকফ বিল পাসে নীরবতা আর রামনবমীতে উৎসব—দুটোই সেই কৌশলের অংশ। সিউড়ির মিছিলে তৃণমূল নেতাদের রামের পতাকা হাতে মাতামাতি দেখে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক বাসিন্দার কথায়, “এবার বুঝেছি, এরা আমাদের ভোটের আগে মসজিদ দেখায়, ভোটের পরে মন্দির দেখায়!”
রাজ্য জুড়ে তৃণমূল ও বিজেপির সমান্তরাল মিছিলকে অনেকেই দেখছেন ‘পরস্পরবিরোধী শক্তির গোপন হ্যান্ডশেক’ হিসেবে। বিজেপি যেখানে হিন্দুত্ববাদের জোরে সরকারি ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে, তৃণমূল সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে ‘সফট হিন্দুয়া’ ইমেজ গড়ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “একদিকে কোরবানির উৎসবে বাধা, অন্যদিকে রামনবমীতে জাঁক—এটা তৃণমূলের ‘সেফটি ভ্যালভ’ কৌশল, যাতে কোনো ভোটই হাতছাড়া না হয়!”

সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূল-বিজেপির এই ‘ভালোবাসা’ নিয়ে তৈরি হয়েছে মিমের বন্যা। ব্যবহারকারীরা লিখছেন—”দুই নৌকায় পা, ভোটারদের চোখে ধোঁয়া!” অন্যদিকে, তৃণমূলের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “ধর্মীয় উৎসবে সবাই অংশ নিতে পারে, এটা রাজনীতি নয়।” কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়: যখন সংবিধানের সেকুলার নীতিকে পাশ কাটিয়ে ধর্মীয় পরিচয়ের রাজনীতি চলে, তখন ‘সবাইকে একসাথে নিয়ে চলা’ মুস্কিল হয়ে যায়
রামনবমীর মিছিলে মাতামাতি হয়তো ক্ষণিকের, কিন্তু বাংলার রাজনীতিতে ধর্মীয় পোলারাইজেশনের যে বীজ পোঁতা হচ্ছে, তার ফল ভবিষ্যতে কী ভয়ংকর হবে—সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।