পুলিশি নির্যাতনেরর পর ভয়ে আত্মহত্যা করলেন জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার এক যুবক।
২৫ বছর বয়সী মাখন দিন গত ৫ ফেব্রুয়ারি আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে, দিন একটি ভিডিও রেকর্ড করেন যেখানে তিনি জানান যে পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে তিনি এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এর একদিন আগে, পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
ভিডিওতে দিন বলেন, “আল্লাহ এবং তার রাসূলের নামে শপথ করে বলছি, আমি কখনও জঙ্গিদের দেখিনি। আমাকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। হেফাজতে আমাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়… বাধ্য হয়ে আমি মিথ্যা বলি যে আমি জঙ্গিদের দেখেছি… তখনই মারধর বন্ধ হয়েছিল।”
৪ ফেব্রুয়ারি, মাখন দিন এবং তার বাবা মোহাম্মদ মুরিদকে তাদের বাড়ি থেকে পুলিশ আটক করে। বিল্লাওয়ার থানায় নিয়ে গিয়ে তাদের আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মুরিদ জানান, “প্রথমে তারা আমাকে নির্যাতন করে, তারপর আমি অন্য ঘর থেকে মাখনের চিৎকার শুনতে পাই।”
সংবাদমাধ্যমকে মুরিদের অভিযোগ, তাকে এবং তার ছেলেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মারধর করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “তার চিৎকার পুরো থানায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।”
পরদিন সকালে, মুরিদকে একটি গাড়িতে করে থানার কাছাকাছি একটি জায়গায় নামিয়ে দেওয়া হয়। তাকে বলা হয়েছিল যে তার ছেলে ইতিমধ্যে বাড়ি পৌঁছেছে। বাবা ছেলে দুজনকেই মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
পরিবারের সদস্যরা জানান, তাকে দুই পুলিশ সদস্য একটি বেসামরিক গাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার মোবাইল ফোন আনতে। তাকে নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল যে তার ফোনে পাকিস্তানি নম্বর রয়েছে।
ভীত মাখন বাড়ি পৌঁছে নতুন পোশাক চেয়ে গোসল করেন এবং নামাজে বসেন। এরপর তিনি মসজিদে গিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড করেন। ভিডিওতে তিনি তার নির্যাতনের কথা সবিস্তারে জানান এবং আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
ভিডিওটি রেকর্ড করার পর, মাখন দিন এটি তার পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেন। তার ভাই লাল দিন জানান, মাখন তাকে ফোন করে বলেন যে তিনি ভিডিওতে সব সত্য প্রকাশ করেছেন এবং বিষ খেয়েছেন।
পরিবারের সদস্যরা মাখন দিনকে মসজিদ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের থামিয়ে তাকে নিজেদের গাড়িতে নিয়ে যায়। মাখনের অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায়, পুলিশ তাকে আবার পরিবারের গাড়িতে তুলে দেয়। দীর্ঘ যাত্রার পর, মাখন দিনকে বিল্লাওয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মাখনের স্ত্রী গর্ভবতী। আরো দুই মেয়ে রয়েছে। পরিবারটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
ওই একই দিনে উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলায় ৩২ বছর বয়সী এক ট্রাক চালককে চেকপয়েন্ট পেরোনোর সময় সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ।

এই দুটি ঘটনা নিয়েই সরব হয়েছে কাশ্মীরের শাসক এবং বিরোধী দল। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ কেন্দ্রের কাছ এই নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। কাশ্মীরের দুই সংসদ সদস্য, আগা সাইয়্যদ রুহুল্লাহ মেহদি এবং ইঞ্জিনিয়ার রশিদ, বারামুল্লা এবং কাঠুয়ার ঘটনাগুলির জন্য দায়ী নিরাপত্তা কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।
কাঠুয়া পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।