Sunday, May 25, 2025
29 C
Kolkata

কলকাতা, চেন্নাই ও আমদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে, সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর দেশের তিনটি প্রধান শহর—কলকাতা, চেন্নাই এবং আমদাবাদে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। জুম্মার নামাজের পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এই বিলের বিরোধিতা করেন। তাঁদের দাবি, এই আইন ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর আঘাত হানছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে। কলকাতার পার্কসার্কাস চত্বরে এদিন বিশাল জনতা জড়ো হয়। হাতে তেরঙ্গা পতাকা আর “আমরা ওয়াকফ সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করছি” ও “ওয়াকফ বিল প্রত্যাহার করুন” লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভকারীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই প্রতিবাদের পিছনে নেতৃত্ব দিয়েছে ‘জয়েন্ট ফোরাম ফর ওয়াকফ প্রোটেকশন’ নামে একটি সংগঠন। শান্তিপূর্ণ হলেও, এই আন্দোলন শহর জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

চেন্নাইয়ে রাজ্যব্যাপি ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা বিজয়ের দল তামিলাঙ্গ ভেত্তরি কাঝাগাম (টিভিকে)। শুধু চেন্নাই নয়, তামিলনাড়ুর বিভিন্ন শহর যেমন কোয়েম্বাটোর এবং তিরুচিরাপল্লিতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। “ওয়াকফ বিল প্রত্যাহার করুন” এবং “মুসলমানদের অধিকার রক্ষা করুন” জাতীয় স্লোগানে মুখরিত হয় রাস্তাঘাট। বিজয় এই বিলকে ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের উপর প্রশ্ন তুলেছে।

গুজরাটের আমদাবাদেও এই বিলের বিরুদ্ধে মানুষ পথে নামেন। তবে এখানে পুলিশের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে যাঁরা রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন, বিশেষ করে প্রবীণদের, তাঁদের জোর করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে আরও ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।কেন এই প্রতিবাদ?ওয়াকফ সংশোধনী বিলে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য নিয়োগ এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি। সরকার বলছে, এটি স্বচ্ছতা আনবে এবং দুর্নীতি কমাবে। কিন্তু বিরোধীরা মনে করেন, এই আইন ভারতীয় সংবিধানের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন করে, যা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে তাদের নিজস্ব বিষয় পরিচালনার অধিকার দেয়। বিক্ষোভকারীরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে ওয়াকফ সম্পত্তি সরকারের হাতে চলে যেতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা গত ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে এই বিল প্রত্যাহারের দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, বাংলার মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, কেন্দ্রে অ-বিজেপি সরকার এলে এই বিল বাতিল করা হবে। অন্যদিকে, বিজেপি এই প্রস্তাবকে ‘ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করেছে। কংগ্রেসও বিলের বিরোধিতা করে বিজেপির উপর বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে।

আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিল একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। দেশজুড়ে বিক্ষোভের মাত্রা বাড়ায় সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। বিক্ষোভকারীরা দাবি করছেন, তাঁদের কথা না শোনা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এই পরিস্থিতিতে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকে সবার নজর।

Hot this week

ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলন, বন্ধ জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ

জাতীয় সড়ক ১১৬এ-র কাজ বন্ধ হয়ে গেল পূর্ব বর্ধমানের...

মালদার এক নার্সিংহোমে মৃত্যুর পরেও চিকিৎসা চলল সাকিরুল ইসলামের, মৃত ব্যক্তিকে নিয়েও ঘৃণ্য ব্যবসা

মালদার কালিয়াচকের নার্সিংহোম কাণ্ডে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। মৃত্যুর...

বিজেপি নেতাদের লাগাতার বিতর্ক—গণতন্ত্রে শৃঙ্খলার সংকট ?

রাজনৈতিক মহলে ফের উত্তাল বিতর্ক। একদিকে রাজস্থান বিধানসভার বিজেপি...

গ্রুপ-সি নিয়োগে নাম থাকা সত্ত্বেও নম্বর কম! মুখ্যমন্ত্রীর ভাইঝির চাকরি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। সাম্প্রতিক...

Topics

মালদার এক নার্সিংহোমে মৃত্যুর পরেও চিকিৎসা চলল সাকিরুল ইসলামের, মৃত ব্যক্তিকে নিয়েও ঘৃণ্য ব্যবসা

মালদার কালিয়াচকের নার্সিংহোম কাণ্ডে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। মৃত্যুর...

বিজেপি নেতাদের লাগাতার বিতর্ক—গণতন্ত্রে শৃঙ্খলার সংকট ?

রাজনৈতিক মহলে ফের উত্তাল বিতর্ক। একদিকে রাজস্থান বিধানসভার বিজেপি...

মালদার লক্ষ্মীপুর এলাকায় নির্মাণাধীন জলাধারে দুর্ঘটনা, পা ফসকে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারালেন এক শ্রমিক

মালদার মানিকচকের এনায়েতপুরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় একটি নির্মাণাধীন জলাধারে কাজ...

Related Articles

Popular Categories