
পাকিস্তানের মাটিতে সম্প্রতি সংঘটিত পহেলগাঁও হামলার জেরে প্রতিবেশী দেশের প্রতি কূটনৈতিক অবস্থান আরও কঠোর করতে চলেছে ভারত। জলের স্রোতের মতো আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার থেকে পাকিস্তানের দিকে ধাবমান ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের প্রবাহে এবার নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্রিয় হয়েছে নয়াদিল্লি। কারণ, এই অর্থ সন্ত্রাসে ব্যবহৃত হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই ভারতের এই পদক্ষেপ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
ভারত ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসবাদের প্রতি পাকিস্তানের নীরব প্রশ্রয়ের বিরুদ্ধে একাধিক স্তরে চাপ সৃষ্টি করেছে। সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ, সাময়িকভাবে জলের প্রবাহ রুদ্ধ করা এবং আকাশপথ স্থগিত করার মতো পদক্ষেপ সেই চাপের প্রাথমিক ধাপ মাত্র। এবার অর্থনৈতিক স্তরেও পাক সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো আঘাত হানার পরিকল্পনা নিচ্ছে ভারত।

ইন্ডিয়া টুডে-র সূত্র অনুযায়ী, দক্ষিণ ব্লকের কর্তারা পাকিস্তানকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করতে একাধিক পদক্ষেপ নিতে চলেছেন। এই পরিকল্পনার অন্যতম মুখ্য দিক হলো, পাকিস্তানকে পুনরায় FATF-এর ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (IMF)-এর সামনে পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা না দেওয়ার আবেদন।
ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) এমন দেশগুলিকে ধূসর তালিকাভুক্ত করে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে অর্থ তছরূপের মাধ্যমে সন্ত্রাসে অর্থ জোগানোর। ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তান এই তালিকায় ছিল, যার ফলস্বরূপ সে সময়ে বিদেশি লগ্নি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে। নয়াদিল্লির পরবর্তী লক্ষ্য হল, ফের সেই তালিকায় পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করে বৈশ্বিক আর্থিক সাহায্য থেকে তাদের বঞ্চিত করা।
এই ধরণের পদক্ষেপ সরাসরি অস্ত্রের পরিবর্তে অর্থনীতিকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার নামান্তর। ভারতের এই কৌশল সার্জিকাল স্ট্রাইকের মতো সরাসরি নয়, বরং আর্থিক অবরোধের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে চাপ তৈরির এক কৌশলী চিত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক পরিসরে পাকিস্তানকে একঘরে করে তুলতে এই অর্থনৈতিক চাপ অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।
নয়াদিল্লি এবার শুধু প্রতিবাদ নয়, কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চলেছে—সন্ত্রাসে প্রশ্রয় দিলে শুধুই সীমান্ত নয়, বন্ধ হয়ে যেতে পারে বিশ্বের দরজা।