
তুষার বৃষ্টিতে রোমান্টিকতা নেই মানুষের মনে, আছে আতঙ্ক। মাঠে সবুজ ঘাসের উপর পড়েছে বরফের পুরু সাদা আস্তরণ। সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি ও ভিডিও দেখে চমকে উঠছে নেটিজেনরা। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলি আসলে খড়গপুরে শিলাবৃষ্টি হওয়ার পরের দৃশ্য। প্রকৃতির এই তাণ্ডবে হাসপাতাল, স্কুল কলেজ, স্টেশন সহ বেশ কিছু জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকৃতির এই বিধ্বংসী রূপ দেখে রীতিমতো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছে এলাকাবাসীরা। খড়গপুরের বেশ কিছু জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ায় রাস্তাঘাট কার্যত অবরুদ্ধ এবং জান চলাচল ব্যাহত রয়েছে। বুধবার সকাল থেকেই রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার কাজ তৎপরতার সঙ্গে শুরু হয়েছে।
খড়গপুরে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা থেকে আচমকা তুমুল ঝড় শুরু হয় সঙ্গে হতে থাকে তুষার বৃষ্টি। ঝড় পরবর্তী খড়গপুরের বিধ্বংসী দৃশ্য দেখে বোঝাই যাচ্ছে এই ঝড়ের দাপট ঠিক কতটা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ভেঙে পড়ে গাছ, ভেঙে যায় হোর্ডিং সহ একাধিক বিলবোর্ড। স্থানীয় প্রশাসন সূত্র মারফত খবর পাওয়া যাচ্ছে, গতকাল ঝড়ের দাপট মূলত খড়গপুর আই আই টি, হাসপাতাল, ও স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বেশি লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের দ্বারা সাধারণ মানুষকে সাময়িকভাবে আশ্বস্ত করলেও, মানুষের মধ্যে থেকে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার রেশ কাটছে না।

মঙ্গলবার রাতে খড়গপুর স্টেশন থেকে মাত্র ৫০ মিটার ব্যবধানে ঘটে মারাত্মক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। কোরোমন্ডেল এক্সপ্রেস খড়গপুর স্টেশন থেকে রওনা দিয়ে মাত্র ৫০ মিটার এগোনোর পরেই ইঞ্জিনের প্যান্টোগ্রাফের উপর ভেঙে পড়ে একটি গাছ। যার ফলে প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ট্রেনটিকে। এরপর ঝড়ের দাপটে ক্রমাগত আটকে পড়ে লোকাল ট্রেনগুলো। জগন্নাথ এক্সপ্রেস, রানি শিরোমণি এক্সপ্রেস-সহ একাধিক লোকাল ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। প্রায় ঘন্টাখানেকের বেশি সময় ধরে ব্যাহত হয় রেল চলাচল। ঝড় থেমে গেলে, রাত দশটা নাগাদ আবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঝড়ের দাপট থেকে নিস্তার পায়নি প্রশাসনিক কার্যালয়গুলিও। খড়্গপুরের ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারের কার্যালয়, ঝড়ের প্রভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি গাছ তার কার্যালয়ের উপর উপড়ে পড়ে।

ভূগোল শিক্ষক ও পরিবেশবিদ সোমনাথ কুমার দাস এন বি টি ভি কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “এই ঘটনা নতুন কিছুই না। এমন শিলা বৃষ্টি এর আগেও হয়েছে। বিশেষত বসন্তকালেই এই ধরনের শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে। দক্ষিণ বঙ্গ, ঝাড়খন্ড বা উড়িষ্যা এই অঞ্চল গুলোতে শিলাবৃষ্টি সাধারণত হয়ে থাকে। তবে এই শিলা বৃষ্টি একটু ব্যতিক্রম। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা গুলো বসন্তকালে অর্থাৎ এই সময় পশ্চিমবঙ্গ এবং তার সংলগ্ন এলাকা গুলিতে সরে আসে। গত এক সপ্তাহ ধরে বঙ্গোপসাগরে হাই প্রেসার তৈরি হয়েছে। যার কারনে জলীয় বাষ্প সৃষ্টি হয়েছে। দুটো বাতাসের বিপরীতমুখী সংঘাতের কারণে ঝড়ের এই ভয়াবহতা। এর ফলে খড়গপুর এবং খড়গপুর সংলগ্ন এলাকায় তুষারপাত সহ ঝোড়ো হাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে।”