
মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ আবারও সুপ্রিম কোর্টের কোপানলে পড়েছেন। কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ আখ্যা দেওয়ার অভিযোগে আদালতের তোপের মুখে ক্ষমা চাইলেও তা ‘অনাক্রম্য’ বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি সূর্য কান্ত। সোমবারের শুনানিতে আদালতের কঠোর ভাষায় ফুটে উঠেছে, “ক্ষমা চাওয়ার নামে কুমিরের কান্না কাঁদছেন অভিযুক্ত”।
ঘটনার সূত্রপাত গত বছর, যখন বিজয় শাহ এক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনার প্রথম মুসলিম মহিলা অফিসার কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসীদের বোন’ বলে উল্লেখ করেন। এই বক্তব্যে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে উঠে এলে শাহ আদালতের নির্দেশে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু বিচারপতিদের দৃষ্টিতে তা ‘আনুষ্ঠানিকতা’ ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিচারপতি সূর্য কান্তের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েছেন মন্ত্রী:
“এ কী ধরনের ক্ষমা চাইলেন? আদালতের ভয়ে নাকি বিবেকের ডাকে? মানুষ যখন আইনের ফাঁদে পড়ে, তখন কুমিরের মতো অশ্রু বিসর্জন দেয়। আপনার ক্ষমা প্রার্থনায় সেই ছলনাই ফুটে উঠেছে।” আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও যোগ করা হয়েছে, “ক্ষমা চাওয়ার ভাষায় কোনো অনুশোচনা নেই, বরং আদালতের নির্দেশ মানার বাধ্যবাধকতা দেখা যাচ্ছে।”
এই মামলার পেছনের রাজনৈতিক ইতিহাসও সমানভাবে উল্লেখযোগ্য। বিজয় শাহ বিজেপির একজন প্রবল আওয়াজ হিসেবে পরিচিত। তাঁর এই বিতর্কিত মন্তব্যের পর বিরোধী দলগুলি তাঁর বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবি তোলে। তবে মধ্যপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কর্মবিরতি নেওয়া হয়নি।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় জনপ্রতিনিধিদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। দিল্লি হাইকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট রাজীব খান্না বলেন, “জনগণের মুখপাত্রদের এ ধরনের বিভেদকামী বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়। সুপ্রিম কোর্টের এই হস্তক্ষেপ প্রশংসনীয়।”
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি, যিনি এই মামলার কেন্দ্রবিন্দু, তিনি এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সেনা মহলের সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনাকে তিনি পেশাদারিত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখছেন। গত বছরই তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “সামরিক বাহিনীতে ধর্ম বা লিঙ্গ নয়, শুধু সেবার মনোভাবই গুরুত্বপূর্ণ।”
আদালত এখন মামলাটির পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করেছে। আইনজীবীদের ধারণা, এই মামলা রাজনৈতিক বক্তব্য ও ব্যক্তিগত আক্রমণের মধ্যে সীমারেখা টানতে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এদিকে, বিজয় শাহের আইনি টিম জানিয়েছে, তারা আদালতের সমস্ত নির্দেশ মেনে চলবেন। তবে এই রায় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কী প্রভাব পড়বে, তা এখন দেখার অপেক্ষা।