আপনার শরীরে কি করোনা আছে? জানুন আজই

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200617-WA0005

এনবিটিভি ডেস্ক: আলোচনা করেছেন ডক্টর শেখ শাহাদাত হোসেন, এলাহাবাদ সেন্ট্রাল রেলওয়ে হসপিটাল হেডকোয়ার্টার (N.C.RLY), রেসিডেন্সি মেডিক্যাল অফিসার

করোনা উপসর্গগুলো এবার জানুন:

জ্বর, মাথা ব্যাথা, ঘাড় ব্যাথা, চোখ লাল বা ব্যাথা, গলা ব্যাথা, সর্দি বা কাশি, পেট ব্যাথা, বমি, পেট খারাপ, পিঠে কোমরে ব্যাথা, হাতে পায়ে মাংসপেশিতে ব্যাথা, জয়েন্টে ব্যাথা, সারা শরীরে ব্যাথা, খাবারে ভয়াবহ অরুচি, নাকে গন্ধ না পাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি যেকোনো দুটো বা একটা সমস্যা থাকলে ধরে নিতে হবে আপনি কোভিড-১৯ সাসপেক্টেড।

উপসর্গ নেই কিন্তু করোনা পজিটিভ!!!

ইদানীং দেখা যাচ্ছে জ্বর,সর্দি,কাশি তেমন তীব্রভাবে অনেক রোগীরই হচ্ছেনা, এমনকি ২/১ দিন জ্বর থেকে আবার সেরে যাচ্ছে। এতে করে রোগী এটাকে ভাইরাল ফ্লু ভাবছে আর নীরবে ছড়াচ্ছে এই মারাত্নক ছোয়াচে রোগ। সারাবছর হাঁচি, কাশি, ঠান্ডা লেগে থাকে, তাই যখন শরীর ব্যথা হয় বৃষ্টি বা ধূলার কারনে এসব হচ্ছে, দয়া করে এভাবে আর ভাববেন না।

উপসর্গ বিহীন হলে কিভাবে বুঝা যাবে করোনা হয়েছে?

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে শরীরে জ্বর মেপে পাবেননা বা ৯৮/৯৯ ডিগ্রি ফা. থাকবে বা জ্বর জ্বর বোধ হবে। অনেক ক্ষেত্রেই কোনো লক্ষন দেখা যায় না। তার পরেও এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় মাঝে মাঝে শরীর দুর্বল লাগে, মানে এমন দুর্বল যা আগে কখনও লাগেনি। হঠাৎ করে স্বাদ গন্ধের অনুভূতি চলে যেতে পারে,শুধু চোখ লাল হতে পারে,অথবা রাতে ঘুমের আগে বুকে হঠাৎ চাপ চাপ লাগতে পারে, বা পাতলা পায়খানা হতে পারে কয়েক বার অন্য লক্ষন ছাড়াই।

পরিবারের সবার অন্যান্য উপসর্গঃ

পরিবারের ৫/৭/১০ জনের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রত্যেকের উপসর্গ আলাদা আলাদা হতে পারে। কারো জ্বর, তো কারো পেট খারাপ, ইত্যাদি। এতজনের কোভিড-১৯ টেস্ট করানো হয়রানিসাধ্য ও ব্যয়সাধ্য। সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে বয়স্ক জন এবং উপসর্গ বেশি এমন জনের টেস্ট করাতে পারেন। তারা পজিটিভ হলে বাকিরাও করোনা সাস্পেক্ট ধরে নিবেন।

কোভিড-১৯ আপনার শরীরে ঢোকার পর সাথে সাথে আপনি ক্রিটিকাল হবেন না। সিম্পটম দেখা দেয়ার পর ৫/৬ দিন আপনি সময় পাবেন। শ্বাসকষ্ট হোক বা রক্ত জমাট বাঁধুক, তার আগে আপনি কয়েকদিন সময় পাবেন, যখন কিছু সতর্কতা আর কিছু মেডিসিনে ভাইরাসের লোড কমাতে পারবেন।

ঐ ৫/৬ দিনকে যারা অবহেলা করেছে বা পাত্তা দেয়নি, ভেবেছে আমার করোনা হবেনা, বা এগুলো সাধারণ জ্বর/পেট খারাপ, তারাই পরবর্তীতে সংটাপন্ন হয়েছেন।

উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে আতঙ্কিত হবেন না।

কি কি পরীক্ষা করাবেনঃ

সিম্পটম দেখা দিলেই টেস্ট করাতে পারবেন সেই চিন্তা বাদ দিন।কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য সিরিয়াল দিয়ে রাখুন। সিরিয়াল অনেক পরে পাবেন। স্যাম্পল দেয়ার পর রেজাল্ট পেতে আরো দেরি হবে। ততদিনে আপনি যদি চিকিৎসক এর শরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে থাকেন তবে তা আপনার জন্যই ভালো হবে।এর ভেতর সম্ভব হলে আপনার চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী আনুষঙ্গিক অন্যান্য টেস্টগুলোও করিয়ে ফেলুন।

এই টেস্টগুলোর মাধ্যমে আপনি আক্রান্ত কিনা বা আক্রান্ত হলেও তা কতদূর ভয়াবহ, তা বোঝা যাবে।

যদি জ্বরযুক্ত উপসর্গ থাকে, তবে অন্যগুলোর সাথে Dengue টেস্টও করিয়ে নেবেন,চিকিৎসক এর নির্দেশ মতো।

চিকিৎসাঃ

করোনা পজিটিভ হলেই আপনি হসপিটালে বেড পাবেন, সেই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। তাই গরম জলকে (পানিকে) ছাড়বেন না। অল্প অল্প চুমুকে গরম পানি খেতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন। এতে দুটো কাজ হবে। শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিয়ে রক্ত ঘন হয়ে যায়,এতে রক্ত জমাট বেধে স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে না এবং গলায় ক্রমাগত গরম শেঁক এনশিওর করা যাবে।

ভিটামিন ডিঃ

দিনের বেলার রোদ গায়ে লাগান।এতে রয়েছে ভিটামিন ডি। কমপক্ষে ১৫ মিনিট প্রতিদিন,সরাসরি সূর্যের আলো গায়ে লাগতে দিন।

জিংক,ভিটামিন সি,আদা দিয়ে রং চা এগুলো নিয়মিত খেতে থাকুন।

পালস অক্সিমিটার ও অক্সিজেন সিলিন্ডারঃ

পালস্ অক্সিমিটার কিনে রাখুন বাড়িতে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখার জন্য।গ্লুকোমিটারের চেয়েও ছোট একটা মেশিন এটা।

পালস্ অক্সিমিটার ও অক্সিজেন সিলিন্ডার ম্যানেজ করার মতো ২০/২৫ হাজার টাকা আপনি বা পরিবারের সবাই মিলে ম্যানেজ করা হয়তো সম্ভব। তাই অযথা কেনাকাটা করে ও বাহুল্য খাওয়া দাওয়া করে টাকা নষ্ট করবেন না। ক্যাশ টাকা রেডি করে এখনই হাতে রাখুন।

সামান্য শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা (অক্সিজেন স্যাচুরেশন না কমলে) বাড়ি বসেই করা সম্ভব। তাই ভয় পেয়ে হসপিটালে ঘুরে হয়রান হতে যাবেন না। বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে নিবেন বা ভাড়া নিবেন। অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।

নেবুলাইজ মেশিনঃ

অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা প্রাথমিক ভাবে সম্ভব না হলেও একটা নেবুলাইজ মেশিন হাতের নাগালে রাখুন।
বুকে চাপ চাপ বোধ হলে,অথবা হালকা শ্বাসকষ্ট হলে,বা নাক আটকে নিশ্বাস নিতে সমস্যা হলে নেবুলাইজেশন বেশ কাজে দেয়।

মনে রাখবেন,বাড়িতে অক্সিজেন ব্যাবহার করুন অথবা নেবুলাইজ, যাই করুন না কেনো নিজে মাতব্বরি করতে যাবেন না।আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন,তিনি আপনার কন্ডিশন বুঝে জানিয়ে দিবেন কতটা পরিমানে এগুলো ব্যাবহার করবেন।

টেলিমেডিসিন যখন ভরসার জায়গাঃ

কোভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ থাকুক (উপসর্গ যুক্ত/ছাড়া), বাড়িতেই থাকবেন। পরিচিত ডাক্তার বা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে ঘরে চিকিৎসা করবেন।
ফেসবুকে ঘুরে বেড়ানো চিকিৎসা (মেডিসিন) নিজে নিজে চালাবেন না। আতঙ্কিত হবেন না ও হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করবেন না।
বাড়িতে টেলিমেডিসিনের চিকিৎসায় আপনার ভাইরাসের লোড কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।

কখন হাসপাতালে নিতে হবেঃ

উপসর্গ দেখা দেয়ার পর বা পজিটিভ হওয়ার পর বাড়িতে রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখবেন। স্যাচুরেশন ৯৩-৯৪% এর নিচে নেমে গেলে হসপিটালের কথা ভাববেন,তার আগে না।

অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে রোগীকে নিয়ে হসপিটালে হসপিটালে ঘুরবেন না। রোগীর অক্সিজেন চলতে থাকবে বাড়িতে(চিকিৎসক এর নির্দেশনা অনুযায়ী)। এবং আপনি সিট খুঁজতে থাকবেন হসপিটালে।নাহলে আতঙ্কিত রোগীর শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে যাবে।

যারা বাইরে বের হন নাঃ

যারা বাইরে বের হচ্ছেন না, বাড়িতে থাকছেন, তারাও ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। যারা তিনমাস বাড়িতে বন্দী থাকার পরও আক্রান্ত হচ্ছেন, কেয়ারটেকার বা দারোয়ানের মাধ্যমে বা অনলাইনে বাজার করছেন, তারা বাজারের ব্যাগের মাধ্যমে ভাইরাস পাচ্ছেন। কাজেই ব্যাগ বা পণ্য পরিস্কার করার এটিকেট মেনে চলুন।

ঘরেও মাস্ক পড়ুনঃ

বাড়িতে সন্দেহভাজন রোগী থাকলে মাস্ক পরুন এবং যতটা পারা যায় তাকে ও তার কেয়ারগিভারকে আলাদা রাখুন।

তাই সবশেষে বলা ভাল সচেতনতাই সুস্থতা।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর