শাহী ঈদগাহতে সার্ভের অনুমতির বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা মুসলমানদের

শ্রীকৃষ্ণের মন্দির সংলগ্ন শাহী ইদগাহই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের আসল জন্মভূমি এমনই দাবি করে আসছিল একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। সেই দাবি নিয়ে নিন্ম আদালতে যান তারা। দাবির বিরোধীতা করে মুসলিমরাও আদালতে যায়। শেষ পর্যন্ত শাহী ঈদগাহতে সার্ভে করার অনুমতি দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে শাহী ইদগাহ মসজিদ ম্যানেজমেন্ট কমিটি।

শাহী ইদগাহ মসজিদ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি এবং অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ এক বিবৃতিতে জানান, কমিটি সুপ্রিম কোর্টে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে।এই রায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মুখপাত্র কাসিম রসুল ইলিয়াসও শাহী ইদগাহ মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের আইনী কমিটি শাহী ইদগাহ মসজিদ কমিটিকে সব ধরনের সহায়তা করবে। ১৯৯১ সালে বাবরি মসজিদ বিরোধের সময় কেন্দ্রীয় সরকার সররকম ধর্মস্থান সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি আইন পাস করেছিল। আইনে বলা হয়েছিল যে ধর্মস্থানগুলির অবস্থান ১৯৪৭ সালের মতোই থাকবে।

তিনি আরও বলেন, এটা আশা করা হয়েছিল যে এই আইন পাসের পর আর কোনো নতুন বিরোধ দেখা দেবে না, কিন্তু দেশে শান্তি ও সহমর্মিতার প্রতি আগ্রহী নন এবং যারা হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তারা এভাবে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ করতে চায়।

এর আগে গত ১৬ নভেম্বর রায় সংরক্ষিত রেখেছিল বিচারপতি ময়াঙ্ক কুমারের নেতৃত্বাধীন ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার সেই রায় ঘোষিত হল। বিচারপতি ময়াঙ্ক নির্দেশ দিয়েছেন, এক জন কোর্ট কমিশনারের পর্যবেক্ষণে সমীক্ষার কাজ করতে হবে শাহি ইদগাহের বিতর্কিত ১৩.৩৭ একর জমিতে। কোর্ট কমিশনায় নিয়োগ সংক্রান্ত শুনানি হবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর।

গত ২৯ অগস্ট হিন্দু পক্ষের আবেদন মেনে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট মথুরার শাহি ইদগাহ মসজিদে ভিডিয়ো সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল। বিচারপতি পীযূষ অগ্রবাল সেই সমীক্ষা তত্ত্বাবধানের জন্য এক আইনজীবীকে কোর্ট কমিশনার এবং দু’জনকে সহকারী কোর্ট কমিশনার নিযুক্ত করেছিলেন। আগামী চার মাসের মধ্যে সমীক্ষার রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু উচ্চতর বেঞ্চ তাতে স্থগিতাদেশ দেয়।

মথুরায় অনেক হিন্দু মন্দির আছে।  বহু হিন্দু বিশ্বাস করেন এখানেই শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। শাহি ঈদগাহ মসজিদ সেই মন্দির চত্বরেই অবস্থিত। তাদের দাবি, ঔরঙ্গজেব এই মসজিদটি তৈরি করেছিলেন প্রাচীন কেশবনাথ মন্দির ভেঙে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের পক্ষ থেকে মন্দির চত্বরের মালিকানা ১৯৩৫ সালে মথুরার রাজার কাছে সঁপে দেওয়া হয়।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ঘনিষ্ঠ শ্রী কৃষ্ণভূমি ট্রাস্ট পর্যায়ক্রমে বর্তমানে এই চত্বরের অধিকারী। স্বাভাবিকভাবেই দুই ধর্মের মানুষদের মধ্যেই এই জায়গা নিয়ে তৈরি হয় সংঘাত। ১৯৬৮ সালে হওয়া একটি চুক্তির মাধ্যমে জমির মালিকানা হিন্দুদের হাতে থাকলেও মুসলিমরা মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায়।

Latest articles

Related articles