আমি তার শরীরে গুলির ক্ষত দেখেছি, কিন্তু আমার হাত বাঁধা : প্রজাতন্ত্র দিবসে মৃত কৃষকের ময়নাতদন্ত করা ডাক্তার

নিউজ ডেস্ক : দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবস কৃষকদের ট্রাক্টরের মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশ এবং কৃষকদের মাঝে হওয়া হিংসাত্মক সংঘর্ষে প্রাণ হারায় এক কৃষক। পুলিশের তরফ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছে, কৃষকের মৃত্যু হয়েছে তার ট্রাক্টর উল্টে যাওয়ার কারণে। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্যান্য কৃষকরা এবং মৃত কৃষকের পরিবার বারবার পুলিশের এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ওই কৃষক নভরিত সিংয়ের। এবার এই বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এলো মৃত কৃষকের ময়নাতদন্তের পর।

২৬শে জানুয়ারি মৃত্যু হওয়া ওই কৃষকের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল উত্তর প্রদেশের রামপুর জেলা হাসপাতালে। ২৭ শে জানুয়ারি রাত ২ টার সময় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয় ওই জেলা হাসপাতালের তরফ থেকে। হাসপাতালের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা রিপোর্টে বলা হয়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং মাথার পিছনে আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে কৃষকের যা পুলিশের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল না। কিন্তু পরিবারের তরফ থেকে এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করা হয়। কৃষক আন্দোলনের সব নেতারা এ রিপোর্ট জাল এবং বানোয়াট বলে উড়িয়ে দেন। পাঞ্জাবের প্রখ্যাত ধর্ম বিষয়ক লেখক এবং মৃত কৃষকের প্রো-পিতামহ হরদীপ সিং জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত করা ডাক্তারদের মধ্যেই একজন তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানিয়েছেন যে তিনি না নভরিত সিংয়ের শরীরে গুলির ক্ষত লক্ষ্য করেছেন কিন্তু তার হাত বাঁধা।

যদিও পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে তার মৃত্যু ব্যারিকেড ছেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় তার ট্রাক্টর উল্টে যাওয়ার কারণে হয়েছে কিন্তু উপস্থিত কৃষককূল এবং তার পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রথমে দিল্লি পুলিশ গুলি করে তাকে সেই কারণেই সে তার গাড়ির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং তার গাড়ি উল্টে যায়। নভরিত সিং এর বাবা জানিয়েছেন, “আমার ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য ট্রাক্টরের চেপে দিল্লি এসেছিল। কিছুদিন পর আবার তার অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাওয়ার কথা। আমরা ৪ঠা ফেব্রুয়ারি তার অন্তিম কার্য সমাধা করে আমাদের কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাব।”

পুলিশের গুলিতে ওই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর প্রচার করায় শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে রাজদীপ সারদেশাই এর মত প্রখ্যাত সাংবাদিক কে। রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের প্রাক্তন কূটনীতিবিদ, ভারতের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বর্তমান কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর সহ আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ এবং দিল্লির বিজেপি সরকারের অধীনস্থ পুলিশ মামলা রুজু করেছে একই খবর সমর্থন এবং প্রচার করার কারণে। তবে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এই জাল হওয়ার অভিযোগ ওঠার প্রকৃত সত্যতা আদালতে সামনে আসবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে পরিবারের তরফ থেকে।

Latest articles

Related articles