এনবিটিভি ডেস্ক : ব্রিটিশ শক্তি, সোভিয়েত রাশিয়া সহ বহু ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী এবং সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির কবরস্থান আফগানিস্তান থেকে প্রস্থানের সিদ্ধান্ত নিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কয়েকদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই ঘোষণা করেছেন। দীর্ঘ ২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ওই সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার কথা। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ২০ বছরের যুদ্ধে কত খরচ হয়েছে তার হিসাব শুরু হয়ে গেছে।
গত শুক্রবার আমেরিকার ব্রাউন ইউনিভারসিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে গত ২০ বছরে মার্কিনীদের খরচ হয়েছে ২.২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এছাড়া চলতি বছর মার্কিন সেনাদেরকে আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হলেও এ খরচ আরো বাড়বে।
রিপোর্ট অনুসারে মোট খরচের শতকরা ৪১ ভাগ বা ৯৩৩ বিলিয়ন ডলার এসেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের ওভারসিজ কন্টিনজেন্সি অপারেশন্স খাত থেকে। আফগান যুদ্ধের মোট খরচের ২৯৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে আফগান ফেরত সেনাদের চিকিৎসার জন্য।
বিবিসি জানায়, আফগানিস্তানে এখনো আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মার্কিন সেনা দায়িত্বরত আছেন। যুক্তরাজ্যের আছেন ৭৫০ সেনাসদস্য। দীর্ঘ দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অবস্থানের উচ্চ মূল্য সব পক্ষকেই চুকাতে হয়েছে। সেই মূল জীবন দিয়ে, জীবনযাপননে ক্ষতি এবং অর্থমূল্যে শোধ করতে হয়েছে।
বিবিসি জানায়, আফগান যুদ্ধের সারসরি ফল হিসেবে এ পর্যন্ত আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে মারা গেছে দুই লাখ ৪১ হাজার মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে ২,৪৪২ জন মার্কিন সেনা, ছয়জন প্রতিরক্ষা দপ্তরের বেসামরিক লোক, ৩,৯৩৬ জন মার্কিন ঠিকাদার এবং মিত্র জোটের ১,১৪৪ জন সেনা। যুদ্ধে ৬৬ হাজার থেকে ৬৯ হাজার আফগান সেনা ও পুলিশ মারা গেছে, পাকিস্তানের সেনা মারা গেছে ৯,৩১৪ জন।
২০ বছর হতে চলেছে, এখনো আফগানিস্তানে শান্তি ফেরেনি। গবেষক দল ‘অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্স’ গ্রুপের তথ্য মতে, ২০২০ সালেও বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি মানুষ আগানিস্তানে নিহত হয়েছেন।
আল-কায়দা, ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা অন্যান্য জঙ্গিদলের কোনোটিই সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। পশ্চিমা বাহিনীর বাকি সদস্যরা চলে গেলে দেশটিতে তাদের পুনরুত্থান হবে।
তালিবানের তরফ থেকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে, তারা মার্কিন আফগান যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। আমেরিকা সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের দাবি যা অযৌক্তিক নয় তা বেশ কিছু বিষয় দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। দীর্ঘ কুড়ি বছর আফগানিস্তানের মাটিতে ন্যাটোর ২৮ টি দেশের সেনা সদস্যদের সঙ্গে হাজার হাজার মার্কিন সেনা এবং উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার করেও এখনো পর্যন্ত আফগানিস্তানের ৭৫ শতাংশের বেশি ভূখণ্ড তালিবানের শাসনাধীন রয়েছে। সেই ভূখণ্ গুলিতে ন্যাটো বা মার্কিন সেনা প্রবেশ করতে পারে না। মাঝে মাঝে ড্রোন হামলা চালিয়ে সেখানে তালেবানদের ডেরাগুলিতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে মার্কিন সেনা। তবে অনেক ক্ষেত্রে তাও সফল হয় না। অন্যদিকে সেখানে ন্যাটো এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সেখানে খরচ হয়েছে বহু বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। মৃত্যু হয়েছে তাদের অসংখ্য সেনাসদস্যের। বিনিময়ে তাদের মেলেনি কিছুই। যে তথাকথিত সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য আফগানিস্তানের প্রবেশ করেছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট সেই সন্ত্রাস তো নির্মূল হয়নি বরং সেখানে এখন আরো অনেক সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্ম নিয়েছে আমেরিকার উপস্থিতি এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের কারণে।