কাবুল থেকে আর মাত্র ৫০ কিমি দূরে তালিবান, মার্কিন নাগরিকদের নিয়ে যেতে ৩০০০ সেনা পাঠাল আমেরিকা

 

নিউজ ডেস্ক : অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতিতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। গতকাল দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার এবং হেরাত দখল করেছে তালিবান। বর্তমানে রাজধানী শহর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে প্রায় সমস্ত এলাকা দখল করে কাবুলকে প্রায় এক আবদ্ধ নগরীতে পরিণত করেছে তালিবান বাহিনী। ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে ১৯ টি প্রদেশের রাজধানী শহরের নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে। ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন ঘানি সরকারের সেনাপ্রধান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। দেশ পালাতে বাধ্য হয়েছেন আফগানিস্তানের উপ-রাষ্ট্রপতি আমরুল্লাহ সালেহ। চলমান পরিস্থিতিতে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রসংঘ জার্মানির ব্রিটেন অস্ট্রেলিয়া চীন ভারত রাশিয়া পাকিস্তান শহর বিশ্বের বহু দেশ। বিশ্বের ১২ টি দেশ ঘোষণা করেছে জোর করে কাবুল দখল করলে আফগানিস্তানের শাসক হিসাবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে না তারা। তবে কোনো কিছুতেই পাত্তা না দিয়ে কাবুল দখলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তালিবান।

 

 

ইতিমধ্যেই আমেরিকা কাবুলে অত্যন্ত সুরক্ষিত গ্রীন জনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস রক্ষা করার জন্য তালিবানের কাছে আবেদন জানিয়েছে। তবে আফগানিস্তানে এখনও পর্যন্ত থেকে যাওয়া মার্কিন নাগরিকদের দ্রুত এবং নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিন হাজার মার্কিন সেনা আজকের দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানের কাবুলে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে। একই উদ্দেশ্যে সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। আসছে জার্মানি এবং কানাডার সেনাও। তবে এই সোনাগুলো সীমিত সময়ের জন্য বিশেষ উদ্দেশ্যে কাবুলে অবস্থানের পর আবার ফিরে যাবে বলে জানানো হয়েছে দেশগুলির তরফ থেকে।

 

সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস সূত্রে খবর, আফগানিস্তানে নতুন করে ৩ হাজার সেনা পাঠাচ্ছে আমেরিকা। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবারই মেরিন কোরের একটি বিশেষ বাহিনী কাবুল পৌঁছে গিয়েছে। বাকি মার্কিন সৈনিকরা রবিবারের মধ্যেই আফগানিস্তান পৌঁছে যাবে। জো বাইডেন সরকারের বিদেশদপ্তর সূত্রে খবর, মার্কিন নাগরিকদের পাশাপাশি আমেরিকায় ভিসার আবেদন মঞ্জুর হওয়া বিদেশিরাও এই সেনা-নিরাপত্তার সুযোগ পাবেন। এই বিদেশিদের মধ্যে রয়েছে আমেরিকার হয়ে কাজ করা আফগান নাগরিকরাও। মূলত কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেখভালের কাজেই লাগানো হবে ৩,০০০ সেনার নয়া বাহিনীকে। এই বিষয়ে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, “এটা স্পষ্ট যে তারা (তালিবান) কাবুলকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চাইছে।” আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনের নির্দেশে আমেরিকার সেনাকে আফগানিস্তানে কর্মরত অসামরিক কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

ইতিমধ্যেই ভারতের উদ্দেশ্যে তালিবান হুমকি দিয়ে বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে সেনা পাঠালে তার চরম পরিণতি ভারতকে ভোগ করতে হবে। এখনো পর্যন্ত নয়াদিল্লির তরফ থেকে এই ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। প্রথম থেকেই আফগানিস্তানের ব্যাপারে প্রায় ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতি’ অবলম্বন করে চলেছে ভারত। আগে তালেবানের বিরুদ্ধে আশরাফ ঘানি সরকারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমর্থন জানালেও গত কয়েক মাসে তালেবানের সঙ্গে ব্যাক ডোর ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত ভারতের এই প্রতিবেশী দেশটির রাজনৈতিক ভাগ্য কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখতে পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে নয়াদিল্লি।

Latest articles

Related articles