জৈদুল সেখ, বহরমপুরঃ দেহব্যবসা না করলে কিংবা কু-প্রস্তাবে রাজি না হলে এবং ঘুষ না দিলে বেতন বন্ধ করে দেওয়ার মারাত্মক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক বেশ কিছু মহিলা কর্মবন্ধু। অভিযোগ উঠেছে একটি বেসরকারি কোম্পানির বিরুদ্ধে। এরই প্রতিবাদে সোমবার থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনশন কর্মসূচি পালন করলেন ৩০-৪০ জন কর্মবন্ধু। তাদের অভিযোগ বেআইনিভাবে কাজ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে এ নিয়ে অনশন শুরু করেন তারা।
প্রসঙ্গত ওই কোম্পানি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেশকিছু অস্থায়ী সাফাই কর্মী সরবরাহ করার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে চুক্তিবদ্ধ। অস্থায়ী কর্মী রাজ্যে বেতন পান সেই তা থেকে নিয়োগকর্তাদের বেশ কিছু টাকা ঘুষ না দিলে নিয়মিত তারা বেতন পাওয়া যায় না। অস্থায়ী এক সাফাই কর্মী জানিয়েছেন তাদের প্রতি মাসে মাইনে ৭৪৮৮ টাকা। কিন্তু যে কোম্পানির হয়ে তারা কাজ করেন সেই কোম্পানির মালিক এবং সুপারভাইসারকে মাসে ২৫০- ৫০০ টাকা দিতে হয় না হলে তাদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।
বেসরকারি সংস্থা নিয়োজিত এই কর্মবন্ধু কর্মীরা। নিয়োজিত সংস্থার সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে কর্মবন্ধু কর্মীদের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, বিভিন্ন অছিলায় তাঁদের দেহ ব্যবসায় নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে! অনশনকারী এক কর্মবন্ধু সুপর্ণা সাহার অভিযোগ “এখানে মেয়েদের সঙ্গে নোংরামি করা হচ্ছে। এ জন্য আমরা সব জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু আমরা কোনও সুফল পাইনি। ভদ্র বাড়ির মেয়ে হয়েও রাস্তায় বসতে বাধ্য হয়েছি।
এছাড়াও তার অভিযোগ মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার দুই কর্মী অভিজিৎ ঘোষ ওরফে পুঁটি এবং শুক্লা মল্লিক তাদের বিভিন্ন ভাবে দেহ ব্যবসায় নামানোর চেষ্টা করেছেন। তারা তা না মানলে, বরখাস্ত করা হয় বলে অভিযোগ। সুপর্ণা দেবীর কথায় “আমি পাঁচমাস ধরে বসে আছি। এই বিষয়ে লেবার কমিশনের অফিসে জানিয়েছি। নেতা মন্ত্রীদের কাছেও গিয়েছি। কোনও সুরাহা হয়নি।” তিনি আরও বলেন“তারা আমাকে ছুটির দিনে ডেকে পাঠিয়েছে! আমার কাছে ফোনে রেকর্ডিং আছে।”
উল্লেখ্য এই অভিযুক্ত সংস্থার অধীনে মোট ৩৭৭ জন কর্মবন্ধু কাজ করেন। তার মধ্য়ে প্রায় ৪৫ জন কর্মবন্ধুকে বেআইনিভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ অনশনকারীদের। অনশনকারীদের একজন আল্পনা খাতুন বলেন“আমার সন্তান হওয়ায়, ছুটিতে ছিলাম। ১ নভেম্বর আমি কাজে আসি আবার। কিন্তু তখন আমাক ২ লক্ষ টাকা দিতে বলা হয়! দিতে না পারলে শুক্লা ঘোষ কুরুচিকর প্রস্তাব করেন।”
এখানেই শেষ হচ্ছে না অভিযোগের তালিকা। ওই বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগও উঠেছে। এক অনশনকারী জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার দুই কর্মী অভিজিৎ ঘোষ ওরফে পুঁটি, শুক্লা মল্লিক পুরুষ কর্মীদের থেকে টাকাও চাইতেন। যাঁদের ১০,০০০ টাকা বেতন তাদের থেকে ৫০০ টাকা এবং যারা মাসিক বেতন হিসেবে ৭,০০০ টাকা পান তাঁদের থেকে ২৫০ টাকা করে নেওয়া হত। এই রকম একাধিক অভিযোগ নিয়ে এদিন তাঁরা মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অনশন কর্মসূচি করেন। পরে সন্ধ্যে ৭টায় বহরমপুর থানার পুলিশের আশ্বাসে কর্মসূচি তুলে নেন অনশনকারীরা। এদিকে অভিযুক্ত কর্মী অথবা ওই সংস্থার তরফে এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।