দক্ষিণ দিনাজপুরে কন্যাশ্রী ফর্ম জালিয়াতির চেষ্টা: নাবালিকা বিবাহের ঘটনায় উত্তপ্ত স্কুল
দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরাম বিবেকানন্দ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পের ফর্ম পূরণে প্রতারণার চেষ্টা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকা। একাদশ শ্রেণির এক নাবালিকা পড়ুয়ার মা নিজের বিবাহিত ও সদ্য সন্তানপ্রসবা মেয়ের পরিবর্তে অষ্টম শ্রেণির এক প্রতিবেশী ছাত্রীকে নিয়ে ফর্ম পূরণ করানোর চেষ্টা করলে ঘটনাটি ধরা পড়ে। এতে স্কুল চত্বরে তৈরি হয় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি।
অভিযোগ, একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর বয়স মাত্র ১৬ বছর, কিন্তু ইতিমধ্যেই তার বিয়ে হয়ে গেছে এবং সে সদ্য মা হয়েছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের শর্তানুযায়ী, স্কুলে নিয়মিত উপস্থিতি ও অবিবাহিত থাকা বাধ্যতামূলক। তাই, মেয়ের অযোগ্যতা ঢাকতে মা প্রতিবেশীর অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভুয়ো পরিচয় ফর্ম পূরণের চেষ্টা করেন।
স্কুলের শিক্ষিকাদের সতর্ক নজরে ধন্দ তৈরি হলে ঘটনা ফাঁস হয়। পরে, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর অভিভাবকরা স্কুলে গিয়ে প্রতিবাদ জানান।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, “আমাদের অজান্তে মেয়েকে অন্য পরিচয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। এই অন্যায়ের বিচার চাই। ওরা হাসপাতাল থেকে ফিরলে এর জবাব দেব।”
একাদশ শ্রেণির ছাত্রীর অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ভুল করে অন্য মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর মেয়ে কন্যাশ্রী পাওয়ার অযোগ্য।
বালুরঘাটের বিডিও সম্বল ঝাঁ জানান, “ঘটনাটি তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হলে অভিভাবকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিদ্যালয় পরিদর্শক মৃন্ময় সরকার বলেন, “কন্যাশ্রীর মূল উদ্দেশ্য বিঘ্নিত করার চেষ্টা হয়েছে। এ ধরনের কাজ সমাজের জন্য ক্ষতিকর।”
এই ঘটনায় পুনরায় আলোচনায় এসেছে নাবালিকা বিয়ে ও সরকারি প্রকল্পের সুযোগ নেওয়ার প্রবণতা। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে
যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা প্রয়োজন।
এছাড়া, অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছেন সমাজকর্মীরা।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের শর্ত:
- অবিবাহিত ও স্কুলে নিয়মিত উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
- মেয়েদের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
- বার্ষিক আর্থিক সহায়তা ও এককালীন অনুদানের ব্যবস্থা।
পতিরামের এই ঘটনা প্রশাসনিক ত্রুটির পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাবকেই তুলে ধরে। কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের সফলতা নিশ্চিত করতে প্রতারণা রোধে কঠোর নজরদারি ও গণসচেতনতা জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।