এরিচ ভন দানিকেন প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘আল্লা বা ঈশ্বর কি ভিনগ্রহী উন্নত কোনও জীব বা এলিয়েন?’ এই মতাদর্শের পিছনে উদাহরণ স্বরূপ দিয়েছিলেন বেশ কিছু প্রমাণ। তার দেওয়া তত্ত্বে অনেকে দ্বিমত পোষন করতেই পারেন। কিন্তু কিছুদিন আগে মহাকুম্ভ মেলায় গিয়ে মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে গঙ্গাস্নান এবং দুহাত পেতে মন্ত্রোচ্চারণ করতে দেখা যায়। তার পরেই স্বেচ্ছায় ইস্তফা, এবং মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির ঘটনা কি আরও বেশি করে উসকে দিচ্ছে দানিকিনের তত্ত্বকে? যোগীর রাজ্যে গিয়ে কোনো অজ্ঞাত ভিনগ্রহী বা ব্যক্তির নির্দেশেই কি ঘটলো এমন ঘটনা? যাকগে সেসব কথা…।
মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর স্বেচ্ছায় পদত্যাগের পর দফায় দফায় চলেছে বৈঠক। এরপরেও, পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর জন্য কোন নাম নির্ধারণ করতে পারেনি মনিপুরের বিজেপির পরিশোধিও দল। স্বভাববশতই ঘটনার প্রতিবাদে বিরোধীরা সুর চরাতে থাকে। উত্তর-পূর্বের বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র বিক্ষোভে লাগাম টানতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার হুমকি দেয়। এতেও কাজ হয়না বিশেষ। এরপর সম্বিত পাত্র দিল্লি ফিরে আসেন এবং তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মনিপুরে ৩৫৬ ধারা জারি করা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেবেলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে জারি করা হয় একটি বিজ্ঞপ্তি। এই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টত মনিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসনের উল্লেখ থাকে। ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু স্বাক্ষরিত ঘোষণা পত্রে স্পষ্টত উল্লেখ রয়েছে, ‘বিভিন্ন তথ্য এবং মনিপুরের রাজ্যপালের দেওয়া বিবৃতি থেকে জানা যাচ্ছে মনিপুরে এখন সুষ্ঠ ভাবে সরকার চালানোর মতো কোন পরিস্থিতিই নেই। তাই সংবিধানের ৩৫৬ ধারা লাঘু করতে হচ্ছে।’
বিরোধীরা দাবি করছে, ডবল ইঞ্জিন সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়েছে। ভারতবর্ষের ডবল ইঞ্জিন তত্ত্ব , দেশে একনায়কত্ব কায়েম করার একটা সুপরিকল্পিত পন্থা। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে আদতে বিরোধীশূন্য পার্লামেন্ট চাইছে বিজেপি। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেও, কেন মনিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হলো?
অমিত শাহর দূত সম্বিত পাত্র রবিবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক করেন। আর মিডিয়ার সম্মুখীন হলেই, ‘ সব চাঙ্গাসি হে’ বলে আশ্বস্ত দেন। এই ধোঁয়াশার মধ্যেই কেটে যায় পাঁচ দিন। এই পাঁচ দিনে বিজেপির কেন্দ্রশাসিত নেতা মন্ত্রীরা সম্পূর্ণ নীরব থেকেছেন।
প্রায় দু’ বছর ধরে অশান্ত রয়েছে মনিপুর। ২১ মাসের বেশি সময় ধরে ২৫৮ জন মানুষ অরাজকতায় প্রাণ হারিয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাটা ছাড়িয়ে গিয়েছে সত্তর হাজারের উপর। বীরেন সিং এর এই ইস্তাফা কি অবশেষে শান্তি ফিরিয়ে আনবে মনিপুরে? উত্তরের আশায় সময়ের দিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।