
এক অভিশপ্ত ছুটির দিনে শ্বেতশুভ্র বরফে মোড়া কাশ্মীরের স্বপ্নভ্রমণ মুহূর্তেই রূপ নিল বিভীষিকায়। পর্যটন আনন্দকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে জঙ্গিদের নির্মম হামলায় প্রাণ হারালেন কলকাতার বৈষ্ণবঘাটার বাসিন্দা বিতান অধিকারী। পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়ে এক হিংস্র আক্রমণের শিকার হন তিনি। জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল স্ত্রী ও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন বিতান। পরিকল্পনা ছিল ২৪ এপ্রিলের মধ্যে কলকাতায় ফেরার, কিন্তু তার আগেই মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পহেলগাঁও হিল স্টেশন থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের বৈসরান উপত্যকায় মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ আচমকাই জঙ্গি হামলা ঘটে। সেখানে এক রিসর্টের লনে উপস্থিত পর্যটকদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন বিতান অধিকারী। গুরুতর আহত হন আরও অনেক পর্যটক, যাঁদের মধ্যে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ুর মানুষরাও রয়েছেন।
নিহত পর্যটকের স্ত্রী ও সন্তান বর্তমানে সুস্থ আছেন বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিহতের বাড়িতে পৌঁছেছেন। পরিবারের সদস্যরা শোকস্তব্ধ। জানা গেছে, বিতান অধিকারী দীর্ঘদিন আমেরিকায় বসবাস করতেন। বৈশাখের শুরুতে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন ও পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করেন।

এই বর্বরোচিত হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সহায়ক সংগঠন TRF। অভিযোগ উঠেছে, হামলার আগে জঙ্গিরা পর্যটকদের নাম ও পরিচয় জানতে চায়, তারপরেই নির্দিষ্ট করে তাদের উপর গুলি চালায়।
এই হামলা নতুন করে কাশ্মীরে পর্যটন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিশেষ করে আগামী জুলাই মাসের ৩ তারিখ শুরু হতে চলা অমরনাথ যাত্রার আগে এই হামলা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জঙ্গিদের উদ্দেশ্য যে এখন সরাসরি পর্যটকদের আতঙ্কিত করা, তা স্পষ্ট।

বিতান অধিকারীর মতো বহু মানুষ যারা কেবলমাত্র পরিবারের সঙ্গে কিছু সুখের সময় কাটাতে চেয়েছিলেন, তারা এখন জঙ্গি সন্ত্রাসের নির্মম শিকার। প্রশ্ন উঠছে, কতটা নিরাপদ কাশ্মীর আজ? ভূস্বর্গে আর কত প্রাণ ঝরবে এই হিংসার খেলায়? এখন সময়, পর্যটন নিরাপত্তাকে আরও জোরদার করে মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার। সেই সঙ্গে প্রয়োজন জাতীয় স্তরে এক সুসংহত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যাতে আর কোনো পরিবারকে এমন মর্মান্তিক ক্ষতির মুখোমুখি না হতে হয়।