Wednesday, May 7, 2025
27 C
Kolkata

“এবার আমায় মুক্তি দিন”— অবশেষে ক্ষোভ উগরে দিলেন দিলীপ ঘোষ

২০১৯ সালে বিজেপির অন্যতম মুখ, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে জিতে আসা দিলীপ ঘোষকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আচমকাই সরে যেতে হয় নিজের পুরনো কেন্দ্র থেকে। তাঁকে পাঠানো হয় বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে— যেখানে জয়ের মুখ দেখেননি তিনি। এই কেন্দ্রে তাঁর পরাজয় নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। অবশেষে এক সংবাদমাধ্যম কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন দিলীপ, জানালেন নিজের ক্ষোভের কথা, এবং এমন কথাও শোনা গেল— “আমার আর রাজনীতির প্রয়োজন নেই, মুক্তি দিন আমায়।”

সম্প্রতি দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়েও চর্চা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। এই বিতর্কের কিছুদিনের মধ্যেই এক সংবাদমাধ্যম-এর মঞ্চে দিলীপ ঘোষ বললেন নিজের মনের কথা— যা এতদিন চাপা ছিল। আগেও একাধিকবার তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নিজের অসন্তোষের, তবে এবার যেন একেবারে স্পষ্ট স্বরে জানালেন, “ভোটে লড়ার কোনও ইচ্ছেই আর নেই আমার, রাজনীতি থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিতে চাই।”

দিলীপ ঘোষ জানালেন, মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে যে অভিমান হয়েছিল, তা অস্বীকার করেন না তিনি। বরং স্পষ্টভাবে বলেন, “অভিমান তো ছিলই, কিন্তু তার চেয়েও বেশি আমি আত্মমর্যাদাবান। দলের কেউ আমাকে কোনোদিন জিজ্ঞেস করেনি, আমি কোথা থেকে লড়ব। শুধু সংগঠন মন্ত্রী একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মেদিনীপুর ঠিক আছে কি না। তখন আমি বলেছিলাম, আপনি চাইলে লড়ব, না চাইলে লড়ব না।”

তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে আসন বদলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সরাসরি কিছু জানানো হয়নি দলের তরফে। বরং সঙ্ঘের মাধ্যমে খবর পৌঁছানো হয়। দিলীপ বলেন, “নাড্ডাজির সঙ্গে সেপ্টেম্বরে কথা হয়েছিল। তখন আমাকে জানানো হয়, সংগঠন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি সেটা মেনে নিই। কিন্তু হঠাৎ করে দেড় মাস আগে জানানো হয় বর্ধমানে যেতে হবে। কে বলেছে জানি না, জানতে চাওয়ারও প্রয়োজন বোধ করিনি, কারণ বলেছিল সঙ্ঘের লোকেরা।”

এই প্রসঙ্গে তিনি তুলে আনেন সেই সময়ের একাধিক অপ্রকাশিত অভ্যন্তরীণ প্রসঙ্গ। বলেন, “আমি কি টিকিট চেয়েছিলাম? আমাকে পাঠানো হয়েছিল সংগঠন তৈরি করতে, নেতা হতে নয়। কিন্তু যখন কেউ ছিল না, আমি নিজের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমি আর সুব্রত চট্টোপাধ্যায়— দু’জনেই সংগঠনের মানুষ। আমাদের কাজ ছিল সংগঠন তৈরি করা, সেটা হয়ে গেছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে দল ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছে।”

সাক্ষাৎকারে দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট ভাষায় বললেন, “এখন আমি রাজনীতি থেকে অবসর নিতে চাই। ভোটে লড়ার ইচ্ছে নেই, আমি রাজনীতিও করব না। আমার আর কোনও প্রাপ্তিযোগ নেই এই ময়দানে। আমাকে মুক্তি দিন।” তাঁর কথায় ধরা পড়ে চাপা ক্ষোভ, হতাশা এবং কিছুটা অভিমান— যা এতদিন দলীয় আনুগত্যে ঢেকে রেখেছিলেন। অবশেষে একান্ত সাক্ষাৎকারে তা বিস্ফোরিত হয়ে উঠল।

সঙ্ঘের প্রতি তাঁর আস্থার কথাও উঠে এল আলোচনায়, তবে সঙ্গেই ইঙ্গিত রইল— সিদ্ধান্ত কতটা তাঁর নিজের ছিল, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়। এখন দেখার, বিজেপি এবং সঙ্ঘ এই বার্তার কী উত্তর দেয় এবং দিলীপ ঘোষ আদৌ রাজনৈতিক ময়দান থেকে সরে দাঁড়ান কি না।

Hot this week

সীমান্তে উত্তেজনা, দেশে সর্বত্র যুদ্ধের মহড়া: ৭ মে জরুরি প্রস্তুতিতে নামছে প্রশাসন

সম্প্রতি পেহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের...

Topics

সীমান্তে উত্তেজনা, দেশে সর্বত্র যুদ্ধের মহড়া: ৭ মে জরুরি প্রস্তুতিতে নামছে প্রশাসন

সম্প্রতি পেহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের...

আত্মহত্যা, না সংখ্যালঘু বিদ্বেষে খুন ?আইআইটির ছাত্র মৃত্যুতে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে

খড়গপুর আইআইটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল...

সংস্কৃতির সঙ্গে সংঘাত: কাশ্মীরে পর্যটকদের উদ্দাম মদ্যপান নিয়ে  উত্তেজনা

কাশ্মীর, যাকে অনেকেই পৃথিবীর স্বর্গ বলে থাকেন, তার প্রাকৃতিক...

Related Articles

Popular Categories