
জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সন্ত্রাসীদের হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কে নতুন করে তিব্র উত্তাপ তৈরি হয়েছে। এই হামলার নৃশংসতা আন্তর্জাতিক স্তরে দেশগুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যেখানে ভারতের পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছে বেশিরভাগ মুসলিম দেশও। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মীয় ঐক্যের বদলে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে এই দেশগুলি।

- ইরান ও তুরস্কের ভূমিকা: ইরান এই উত্তাপ কমানোর জন্য মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে এবং নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। অন্যদিকে, ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের সমর্থক তুরস্ক এবার সংযত অবস্থান নিচ্ছে। এর পিছনে ভারতের সাথে তুরস্কের ২০২৪ সালে ১০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সম্পর্ক মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি তুরস্ক স্পষ্ট করে বলেছে, পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ তারা করছে না।
- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং কাতার: সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং কাতারের মতো দেশগুলি ভারতের সাথে বাণিজ্য, জ্বালানি রপ্তানি ও শ্রমখাতে গভীরভাবে যুক্ত। সৌদি আরব ‘ভিশন ২০৩০’ প্রকল্পের অধীনে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য চাইছে, যেখানে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে কাশ্মীর ইস্যুকে তারা দ্বিপাক্ষিক বলে উল্লেখ করে পাকিস্তানকে অন্ধ ভাবে সমর্থন থেকে বিরত আছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ পাহালগাম হামলার ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেনি।
- কাতারের নিরপেক্ষতা: কাতার এই ভারত-পাকিস্তান বিরোধে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকার ঘোষণা করেছে। দেশটির বৈদেশিক নীতি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে না জড়ানোকে প্রাধান্য দেয়। ধর্মীয় ঐক্যের চেয়ে বাণিজ্যিক স্বার্থই তাদের কাছে বড়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান গত কয়েক দশকের ধারাকে ভেঙেছে। ভারতের সাথে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, জ্বালানি চাহিদা ও ভূ-কৌশলগত মেরুকরণই এর মূল কারণ। এমনকি পাকিস্তানের ঐতিহ্যগত মিত্রদেরও ভারসাম্য বজায় রাখতে দেখা যাচ্ছে, যা বৈশ্বিক রাজনীতিতে অর্থনীতির প্রাধান্যের প্রতিফলন।

এই প্রবণতা ইঙ্গিত দেয় যে আধুনিক বৈশ্বিক সম্পর্কে ধর্মীয় বা মতাদর্শগত জোটের চেয়ে বাস্তবসম্মত স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি ও কৌশলগত অবস্থান দেশগুলোর নীতিনির্ধারণে সরাসরি প্রভাব ফেলছে বলে মনে করা হয়।