Wednesday, May 7, 2025
27 C
Kolkata

বিজেপিতে দিলীপ বিতর্কে ‘নজরদারির বার্তা’, প্রকাশ্য সমালোচনার বিপক্ষে মুখপাত্র শমীক

দিঘায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে যোগ দেওয়ার পর থেকেই প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। কেউ কেউ প্রকাশ্যে, আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক কঠোর মন্তব্য করে যাচ্ছেন দিলীপের বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, প্রকাশ্যে দলের নেতাকে আক্রমণ করাকে দল কোনওভাবেই সমর্থন করছে না। বরং বিষয়টিতে দল নজর রাখছে এবং প্রয়োজন মনে করলে উপযুক্ত পদক্ষেপও নেবে।

শমীকের বক্তব্য অনুযায়ী, বিজেপির কেউ ইচ্ছেমতো যা খুশি লিখতে পারেন না। এ বিষয়ে সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি। তাঁর ভাষায়, “যে যখন যা খুশি লিখছেন, সেটা ব্যক্তিগত বিষয় হতে পারে, কিন্তু দল তার নিজস্ব নীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেই পারে।” একই সঙ্গে তিনি পুরো ঘটনাকে ‘অনভিপ্রেত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “বিজেপির মতো দলের পক্ষে এটি কাম্য নয়।”

দলের মুখপাত্রের এমন মন্তব্য থেকে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দিলীপের বিরুদ্ধে যাঁরা সম্প্রতি আক্রমণাত্মক হয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশেই এই বার্তা। কারণ মুখপাত্র হিসেবে শমীকের বক্তব্যকে রাজ্য বিজেপির আনুষ্ঠানিক অবস্থান হিসেবেই ধরা হচ্ছে।

সম্প্রতি, দিলীপ ঘোষ দিঘায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজ্য বিজেপির আরেক মুখপাত্র তরুণজ্যোতি তিওয়ারি ফেসবুকে পোস্ট করে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করেন। এরপর দলের বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সংবাদমাধ্যমে জানান, এই সফর ও মমতার পাশে বসাকে দল ‘অনুমোদন’ দিচ্ছে না। একই সুরে দিলীপকে আক্রমণ করেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, প্রাক্তন ব্যারাকপুর সাংসদ অর্জুন সিং, ও মুখপাত্র কেয়া ঘোষ। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নাম না করে দিলীপকে খোঁচা দেন বলেও মনে করা হচ্ছে।

তবে এই আক্রমণের পাল্টা দিয়েছেন দিলীপও। মন্দির উদ্বোধনের পর দিন সকালে দিঘার সমুদ্রসৈকতে হাঁটতে বেরিয়ে তিনি বলেন, “যাঁরা মমতার আঁচলের নিচে বড় হয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে বিজেপিকে শেখার কিছু নেই।” রাজনৈতিক মহলের মতে, শুভেন্দুকেই ইঙ্গিত করেই এই মন্তব্য করেন দিলীপ।

এই প্রেক্ষাপটে শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “দিলীপ ঘোষ একজন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি, প্রাক্তন সাংসদ এবং প্রভাবশালী নেতা। তাঁর কী করা উচিত, তা নির্ধারণ করবেন যাঁরা দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দায়িত্বে আছেন। আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলার অধিকার রাখি না। তবে দল পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।”

অন্যদিকে, বিজেপির এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে যখন তৃণমূল কংগ্রেস পরোক্ষভাবে মজা পাচ্ছে, তখন শাসক দলের উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছেন শমীক। তাঁর বক্তব্য, “কয়েকটা ফেসবুক পোস্ট দেখে বা ‘জয় জগন্নাথ’ শুনে যদি কেউ ভেবে নেয় বিজেপি ভিতরে ভিতরে ভেঙে পড়ছে, তাহলে তারা ভুল করছে। তবে যা ঘটেছে তা নিন্দনীয়, এবং প্রত্যেককে, যত বড় নেতাই হোন না কেন, দায়িত্বশীলভাবে আচরণ করা উচিত।”

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, দিলীপ ঘোষের দিঘা সফর কেন্দ্র করে বিজেপির অন্দরমহলে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, তা এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব কী ভূমিকা নেয়, তার দিকেই এখন নজর রাজনৈতিক মহলের। তবে শমীকের কণ্ঠে স্পষ্ট—দল চাইছে না, দিলীপকে নিয়ে প্রকাশ্যে টানাটানি চলুক। বরং বিষয়টি অভ্যন্তরীণভাবে মেটানোর ইঙ্গিতই দিচ্ছে গেরুয়া শিবির।

Hot this week

সীমান্তে উত্তেজনা, দেশে সর্বত্র যুদ্ধের মহড়া: ৭ মে জরুরি প্রস্তুতিতে নামছে প্রশাসন

সম্প্রতি পেহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের...

Topics

সীমান্তে উত্তেজনা, দেশে সর্বত্র যুদ্ধের মহড়া: ৭ মে জরুরি প্রস্তুতিতে নামছে প্রশাসন

সম্প্রতি পেহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের...

আত্মহত্যা, না সংখ্যালঘু বিদ্বেষে খুন ?আইআইটির ছাত্র মৃত্যুতে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে

খড়গপুর আইআইটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল...

সংস্কৃতির সঙ্গে সংঘাত: কাশ্মীরে পর্যটকদের উদ্দাম মদ্যপান নিয়ে  উত্তেজনা

কাশ্মীর, যাকে অনেকেই পৃথিবীর স্বর্গ বলে থাকেন, তার প্রাকৃতিক...

Related Articles

Popular Categories