
কলকাতা, ৪ মে ২০২৫: ছাব্বিশ হাজার চাকরি বাতিলের সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে শীর্ষ আদালতে রিভিউ পিটিশন জমা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগে করা ঘোষণা অনুযায়ী, এই আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজ্য চাইছে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধারে আদালতের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা ।
২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট এপ্রিল ২০২৫-এ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে, তবে কিছু সংশোধনী যুক্ত করে। যেমন, পূর্বের সরকারি চাকরিজীবীদের আগের পদে ফেরার সুযোগ দেওয়া এবং বয়সসীমা শিথিল করা ।
রাজ্যের যুক্তি হলো, একসাথে এত বিপুল সংখ্যক চাকরি বাতিল হলে স্কুলগুলির কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে, শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও, গ্রুপ-সি ও ডি-র শিক্ষাকর্মীদের জন্য এই ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে । মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই চাকরিহারা অশিক্ষক কর্মীদের মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করলেও, ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর দাবি উঠেছে তাদের তরফে ।
সুপ্রিম কোর্ট ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা উত্থাপন করেছিল, কিন্তু যোগ্য-অযোগ্য প্রার্থী পৃথক করা সম্ভব না হলে পুরো প্যানেল বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছিল ।
ওএমআর শিটের কারচুপি ও নথি হারানোর কারণে প্রকৃত তথ্য যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ায় আদালত এই সিদ্ধান্ত নেয় ।

তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরে এই রায়কে “বিড়ম্বনা” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একাংশের মতে, নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করলেও, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ভবিষ্যতের নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না বলে মত শাসকদলের কয়েকজন নেতার । অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলি সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, “প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ফলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে” ।
রিভিউ পিটিশনের শুনানির তারিখ এখনও ঘোষিত হয়নি। তবে আদালত যদি রায় পরিবর্তনে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, যেখানে পূর্ববর্তী চাকরিজীবীদেরও আবেদন করতে হবে ।