বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের শাসনকালে শিল্পক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগের কোনও বাস্তব চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না, তখন সরকার কোটি কোটি টাকার বাজেট করে, ভীষণ মূল্যবান শিল্প সম্মেলনের আয়োজন করে দাবি করে যে রাজ্যে বিনিয়োগের নতুন স্রোত চালু হবে। কিন্তু বাস্তবে, উৎপাদন শিল্পে নতুন লগ্নির কোন সুস্পষ্ট লক্ষণ নেই। বরং একের পর এক পুরানো শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ফলে কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, গত পাঁচ বছরে ২,২২৭টি কোম্পানি তাদের নিবন্ধিত অফিস পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করেছে। তৃণমূল শাসনের সময়কালে বড় ও মাঝারি কারখানার সংখ্যাও লক্ষাধিক হারে কমে গেছে। এর ফলে উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগকারীরা রাজ্যের পরিবেশে আস্থা হারাচ্ছেন – তারা মনে করেন, প্রশাসনিক ও পরিবেশগত অসুবিধার কারণে লাভজনক ব্যবসা চালানো কঠিন। এমনকি কিছু কোম্পানি, কলকাতায় নিয়োগের ইন্টারভিউ নেওয়ার পর, কার্যক্রমের জন্য অন্য রাজ্যে থাকা অফিসে যোগদানের নির্দেশ দিচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত শিল্প সম্মেলনের মাধ্যমে এদিকে সরকার দাবি করছে যে, বিভিন্ন সম্মেলনের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রস্তাবের অঙ্ক লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার হলেও বিরোধীদের অভিযোগ অনুযায়ী, এই সম্মেলনগুলি শুধুমাত্র খাতায়কলমে জমা পড়েছে – বাস্তবে এ ধরনের বিনিয়োগ কার্যকরী রূপান্তরে আসেনি। এমনকি একবছরে ১৭৭টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে ২৯ হাজারের বেশি শ্রমিককে চাকরি হারাতে হয়, যা অবশিল্পায়নের একটি স্পষ্ট সংকেত বহন করে।
পরিবেশ দপ্তরের প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে রাজ্যের অনুমোদিত চালু শিল্পের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। উৎপাদনের পাশাপাশি এমএসএমই, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে শ্রমজীবীদের আর্থিক অবস্থার নিমজ্জন ও কর্মসংস্থানহীনতার করুন চিত্র ফুটে উঠেছে। এক গবেষণাগ্রন্থে এই দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে, যা নির্দেশ করে—শিল্পায়নের অভাবে বাঙালি শ্রমিকরা ক্রমশ নিম্নগামী আর্থিক অবস্থা ও অনিয়মিত কর্মসংস্থানের শিকার হচ্ছেন।
বিরোধীদের জিজ্ঞাসা, “কেন তৃণমূল সরকারের শিল্প সম্মেলন হোক বা কোটি কোটি টাকার বাজেট খরচ হোক, রাজ্যে বাস্তব শিল্প বিনিয়োগ কেনই বা বৃদ্ধি পাচ্ছে না?” প্রশ্নটি তীব্রভাবে উঠছে। সরকারের বর্তমান কার্যক্রম এবং প্রস্তাবিত নীতির মাঝে বাস্তবতা ও কার্যকারিতার বড় ফারাক রয়েছে। কোনো শ্বেতপত্র বা নির্দিষ্ট বাস্তব বিনিয়োগের প্রতিবেদন প্রকাশিত না হওয়ায়, শিল্পপতিদের আস্থা ও লগ্নি বাড়ানোর পরিবর্তে, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে – যা এই শাসনের বিরুদ্ধে একটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করছে।
যেখানে তৃণমূল সরকার শিল্প সম্মেলনের মাধ্যমে রাজ্যের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানে উৎপাদন শিল্প ও কর্মসংস্থান প্রকৃতপক্ষে হতাশাজনক অবস্থায় রয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর, কারখানার বন্ধ হয়ে যাওয়া, এবং কর্মসংস্থানের ক্ষয়ক্ষতি ইঙ্গিত দেয় যে, শাসনের প্রচারিত শিল্পায়ন নীতির বাস্তবায়ন অনেক দুরত্বে। এ পরিস্থিতিতে, শিল্প ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য বাস্তব নীতিমালা ও কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া অপরিহার্য—যা বর্তমানে তৃণমূল সরকারের নীতিতে অনুপস্থিত বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।