
কাজী নজরুল ইসলাম ‘মানুষ’ কবিতায় লিখছেন,
“আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তেমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু!
তব মসজিদ-মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!
অপরদিকে স্বামী বিবেকানন্দ, গুরু ভাইয়ের উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠিতে লিখছেন, “যে দেশের মানুষ দু’বেলা দু’ মুঠো খেতে পায় না, তাকে ধর্মের কথা বলা মানে অপমান করা। উদারতাই একমাত্র ধর্ম যে তার অনন্ত হাত বিস্তৃত করে সকলকে আলিঙ্গন করবে।” আজ ভারতবর্ষে ধর্মের যাতাকলের মাঝে পড়তে হয়েছে সেই উদারতাকে।
উপাসনা স্থল আইন সংক্রান্ত মামলায় প্রতিনিয়ত জমা পড়ছে নতুন আবেদন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। নতুনভাবে দায়ের হওয়া মামলায় নোটিশ জারি করেনি শীর্ষ আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। ১৯৯১ সালের আইন অনুযায়ী, স্বাধীনতার সময় কোন ধর্মীয় স্থানের চরিত্র যা ছিল, সেটাকে অবিকৃত অবস্থায় রাখতে হবে। তবে অযোধ্যার রাম মন্দিরকে এই বিবাদের বাইরে রাখা হয়। ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন নিয়ে চূড়ান্ত আপত্তি বিজেপি দলের। বিজেপি নেতা ও আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে দ্বারস্থ হয়। এই প্রসঙ্গে মামলা চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না শুনানি চলাকালীন বলে ওঠেন, “যথেষ্ট হয়েছে, এইবার এইটা বন্ধ করতে হবে।”
এই মামলার শুনানি চলাকালীন বিজেপি ইতিমধ্যে বেশ কিছু মসজিদকে হিন্দু ধর্মস্থান বলে দাবি করেছে। সর্বমোট ১৮ টি ক্ষেত্রকে নিয়ে নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করেছে বিজেপি। তারা দাবি করছে এই ১৮ টি ক্ষেত্রে হিন্দু মন্দির ভেঙে মসজিদ বানানো হয়েছে। তাই এই ১৮ টি জায়গায় মসজিদ ভেঙে মন্দির বানানো একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র গুলি হলো, সম্ভল মসজিদ, জ্ঞানবাপী মসজিদ ও শাহি ইদগা।
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, গোটা দেশে ধর্মস্থান ক্ষেত্র গুলোতে সমীক্ষা চালানোর মামলা স্থগিত রেখে। যার ফলে নিম্ন আদালত গুলিতে এই ধরনের মামলার শুনানি বন্ধ রাখা হয়েছে। NBTV কে দেয়া সাক্ষাৎকারে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “এই আইনে একতরফা। কোনো রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েগেলে সে তার সংস্কৃতি পরম্পরা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না তা হতে পারেনা। আমাদের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করার জন্য পরিবর্তন চাই।” তিনি আরো জানান, “অশ্বিনী উপাধ্যায়ের মত আইনজীবীদের মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছি। পরাধীনতার সমস্ত ইতিহাসকে ধুয়ে ফেলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্পষ্টত জানান, এ নিয়ে নতুন আবেদন শীর্ষ আদালত শুনবে না, যদিনা কোনো নতুন বক্তব্য জানিয়ে আবেদনকারী মামলার পক্ষ হতে চান।