করোনা ঝুঁকি কমাতে রাজ্যকে একগুচ্ছ পরামর্শ দিলেন অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200716-WA0002

এনবিটিভি: করোনা নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পরও সংক্রমশ বাড়ছে। সাধারণ মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যকে একগুচ্ছ পরামর্শ দিল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি বোর্ড।

রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সে দিকে নজর রেখে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত থাকার কথা বলেছে ওই বোর্ড। তাঁদের পরামর্শ, যাঁদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হোক। উপসর্গহীন হলে বা কম উপসর্গ থাকলে হাসপাতালের বদলে রোগীদের কমিউনিটি কেয়ার সেন্টারে রা্খার প্রস্তাবও দিয়েছে বোর্ড।

এ রাজ্য-সহ গোটা দেশ জুড়েই দ্রুত বদলাচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। সে কথা মাথায় রেখে কৌশল বদলের কথাও বলছে ওই বোর্ড। বুধবার তাদের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ছ’টি নতুন পরামর্শের কথা।

১) করোনা এখনও ছড়াচ্ছে। লকডাউনের পর সংক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে গিয়েছে। এ কথা মাথায় রেখেই এখন সাধারণ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা যেমন মাস্ক পরা, শারীরিক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বদ্ধ জায়গায় ভিড় এড়িয়ে চলার মতো বিষয়গুলিকে চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যাতে সাধারণ মানুষ বেশি করে মাস্ক পরেন সে জন্য উচ্চ মানের মাস্ক কিনে যতটা সম্ভব বিলি করার মতো সরকারি উদ্যোগও এই প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ মানের মাস্ক পরলে কী বিপুল সুবিধা হবে তা বোঝানোর জন্য সংবাদমাধ্যমে প্রচার অভিযানও চালাতে পারে সরকার।

২) করোনা নিয়ন্ত্রণে উচ্চহারে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন ক্লাস্টারগুলিকে চিহ্নিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই এলাকাগুলিকে কন্টেনমেন্ট জোন করা উচিত। যদি সম্ভব হয় তা হলে পরীক্ষা আরও বাড়ানো উচিত, সমস্ত পদ্ধতিও ব্যবহার করা প্রয়োজন।

৩) অতিমারির জেরে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং দীর্ঘস্থায়ী লকডাউন। এর সবচেয়ে বেশি কুফল ভোগ করতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে প্রান্তিক হয়ে থাকা গোষ্ঠীগুলিকে। ওই সব গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। তাঁদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা করতে হবে।

৪) এই রোগ বয়স্ক বা যাঁদের কো-মর্বিডিটি  (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, সিওপিডি, কিডনির সমস্যা, কম প্রতিরোধ ক্ষমতা, ক্যানসার) আছে তাঁদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ। এমন ক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে হবে যাতে ওই সব ব্যক্তি, তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠরা যেন মাস্ক পরেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন, ভিড় স্থানে, বিশেষ করে বদ্ধ জায়গায় যেন এড়িয়ে চলেন। যদি এঁদের মধ্যে কেউ সামান্য অসুস্থও হয়ে পড়েন, তা হলে তাঁরা যেন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যাঁদের ঝুঁকি রয়েছে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে যেন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। হাসপাতালগুলিতেও যেন এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞরা থাকেন। করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের বিষয়টি মাথায় রেখে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, অনুমোদিত বিভিন্ন ওষুধ মজুত রাখা প্রয়োজন। প্রয়োজন মেটাতে রাজ্যের সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি এত দ্রুত বদলাচ্ছে যে সে দিকে নজর রেখে ১৫ দিন অন্তর নীতি নির্ধারণ প্রয়োজন।

৫) যাঁদের ঝুঁকি কম, উপসর্গহীন অথবা কম উপসর্গ রয়েছে তাঁদের হাসপাতালে না থাকতে উৎসাহ দেওয়া উচিত। এই ধরনের রোগীদের জন্য হোম আইসোলেশনই উপযুক্ত। যদি বাড়িতে জায়গা না থাকে তা হলে কমিউনিটি কেয়ার সেন্টারই উপযুক্ত। আমাদের জানানো হয়েছে, এ জন্য সরকার সেফ হোম তৈরি করেছে। নিশ্চিত হতে হবে, সেখানে যেন যথেষ্ট শয্যা থাকে এবং উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণেরও ব্যবস্থা থাকে। কমিউনিটি কেয়ার সেন্টারের মান বজায় রাখতে গোষ্ঠীগুলিরও উচিত এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আদর্শগত ভাবে জুড়ে যাওয়া।

৬) সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, করোনাকে ঘিরে একটি বিরাট আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যে সব পরিবারে সংক্রমণ ধরা পড়েছে তাঁদের এক ঘরে করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। বাংলার যে ঐতিহ্য নিয়ে আমরা গর্ব করি এতে তা খাটো হচ্ছে। এমন হলে মানুষকে সংক্রমণ লুকিয়ে রাখতে উৎসাহ দেওয়া হবে। এই ধরনের আতঙ্ক অন্যায্য। আমরা এই রোগকে জয় করব কিন্তু আমাদের সামাজিক বুনোটটা যেন অক্ষত থাকে। যাঁরা করোনা আক্রান্তদের উপর এমন অত্যাচার চালাচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার। এই সব দ্বন্দ্ব মেটাতে কোভিড উইনার্সের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্য করছে। কিন্তু গোষ্ঠীর সাহায্য ছাড়া এই কাজ প্রায় অসম্ভব। বাংলার যুব সমাজকে আমাদের নেতৃত্বে প্রয়োজন যাঁদের কাছে এই রোগটি কম ঝুঁকিপূর্ণ।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর