
দিল্লি, ২২ এপ্রিল: কেন্দ্র সরকারের বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (AIMPLB)-সহ দেশজুড়ে প্রধান মুসলিম সংগঠনগুলি। মঙ্গলবার তালকাটোরা স্টেডিয়ামে ‘তাহাফফুজ-ই-আউকাফ ক্যারাভান’ শীর্ষক সমাবেশে জামাত-ই-ইসলামি হিন্দ, আইএমআইএম প্রধানের মতো নেতৃত্বের উপস্থিতিতে আইনের সম্পূর্ণ রদ দাবি করা হয়। সমাবেশে ঘোষণা করা হয়েছে, ৮৭ দিনব্যাপী ‘ওয়াকফ বাঁচাও’ প্রচারে ১ কোটি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পেশ করা হবে।
AIMPLB-এর দাবি, নতুন আইনে সরকার ওয়াকফ সম্পত্তি স্বেচ্ছায় দখল করতে পারবে, যা সংবিধানের ২৫ ও ২৬ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। এছাড়া, ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য নিয়োগ, জেলা কালেক্টরদের সম্পত্তি মূল্যায়নের ক্ষমতা দেওয়াকে ‘হিন্দুত্ববাদী হস্তক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহিম মুজাদ্দিদি ভিডিও বার্তায় অভিযোগ তোলেন, “এই আইন সাম্প্রদায়িক এজেন্ডার হাতিয়ার, যা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে ক্ষুণ্ন করছে।”
বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় সতর্ক করে বলেন, “গণতন্ত্রে সংবিধানবিরোধী চ্যালেঞ্জ সহ্য করা হবে না। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে তার মাশুল গুনতে হবে।” মন্তব্যটিকে ওয়াকফ আন্দোলনের প্রতি পরোক্ষ চাপ হিসাবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
আন্দোলনের রোডম্যাপ:
- ৩০ এপ্রিল: রাত ৯টা থেকে দেশজুড়ে ‘ব্ল্যাকআউট’—বাড়ি-অফিসের আলো নিভিয়ে ৩০ মিনিটের প্রতীকী প্রতিবাদ।
- ৭ মে: দিল্লির রামলীলা ময়দানে মেগা সমাবেশ।
- জুমার নামাজ পর: সর্বত্র মানববন্ধন, স্মারকলিপি জমা ও প্রতীকী গ্রেপ্তারি।
- ৫০টি শহরে: ইসলামিক স্কলারদের সাথে বৈঠক করে আইনের ‘এজেন্ডা’ ব্যাখ্যা।

AIMPLB এই আন্দোলনকে ১৯৮৫ সালের শাহ বানো কেসের মতো গণজোয়ারে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে। সংগঠনের মহিলা শাখা গ্রাম-শহরে নারী সচেতনতা শিবির চালাবে। তবে, বোর্ড সমর্থকদের “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও সংযম” পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি অনুমোদিত এই আইনে ওয়াকফ সম্পত্তি জনহিতের কারন দেখিয়ে অধিগ্রহণ, বোর্ডের স্বায়ত্তশাসন খর্ব ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘বৈষম্যমূলক’ নীতি স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। AIMPLB-এর পক্ষে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতিও চলছে বলে সমাবেশে জানানো হয়।