জন্ম শতবর্ষে উপেক্ষিত অভিনেতাদের অভিনেতা  দিলীপ কুমার

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

Dilip-Kumar-2008

~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি

দুনিয়া জুড়ে তার অগণিত ভক্তর মত ভেবেছিলাম প্রতিবারের মত এবারও মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়ে হসপিটাল  থেকে পালি হিলের বাংলোতে ফিরবেন ইউসুফ সারওয়ার খান ওরফে দিলীপ কুমার। ভেবেছিলাম মাত্র দেড় বছর পার হলে একশো বছর এ পা দেবেন ফিল্মী দুনিয়ার এই লিভিং লিজেন্ড। কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে দুনিয়া ছাড়েন ফিল্মী দুনিয়ার বেতাজ বাদশা দিলীপ কুমার। বিখ্যাত থ্রি মাস্কেটিয়ারের রাজ কাপুর আর দেবানন্দ আমাদের ছেড়ে গেছেন আগেই এবার দিলীপ কুমার চলে গেলেন, বৃত্ত সম্পূর্ণ হলো।

অনেকের ভুল ধারণা আছে যে নিজের পরিচয় গোপন করে ইউসুফ হয়েছেন দিলীপ। ভুল, আসল কারণ হলো বায়স্কোপ দু চোখের বিষ ছিল ইউসুফের আব্বার। তাই বাপের নজর এড়াতেই পেশোয়ারি পাঠান ইউসুফ হয়ে যান দিলীপ কুমার।

দিলীপ কুমার প্রসঙ্গে কথা বলছিলাম সেলিম খানের সঙ্গে। ইন্টারভিউয়ের পর চা নিয়ে আড্ডা হচ্ছিল সেলিম সাহেবের সমূদ্র ঘেঁষা গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দায় বসে। গিয়েছিলাম কলকাতার বহুল প্রচারিত বাংলা কাগজের জন্য বম্বের এক সময়ের সব থেকে নামী ফিল্মী স্ক্রীন প্লে কাম ডায়লগ রাইটার সেলিম জাভেদের জুটি ভাঙার কারণ জানতে। দিলীপ সাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেলিম সাহেব নড়ে চড়ে বসলেন আর কাজের লোক গঙ্গাধর কে আবার চায়ের ফরমায়েশ করে জানালেন, তার সুদীর্ঘ ফিল্মী ক্যারিয়ারে তিনি একজন অভিনেতাকেও দেখেননি যে দিলীপ কুমারের প্রভাব মুক্ত।  ওই ইন্টারভিউয়ের বাকি অংশ রেকর্ড করতে জুহুর সাগর সম্রাট বিল্ডিং এ যেতে হয়েছিল জাভেদ আখতার এর কাছে। সেলিম সাহেবের মত  এক সুরে কথা বলেছিলেন, শোলে, জনজির, সিতা ঔর গীতা’র মত হিট ফিল্ম জুটির অন্যতম লেখক মশহুর শায়র জাভেদ। একই শ্রদ্ধা দেখেছি ভারতীয় ফিল্মী দুনিয়ার মাইলস্টোন শোলের পরিচালক রমেশ সিপ্পীর ইন্টারভিউ এর সময়। 

গিয়েছিলাম দিল্লির এক ইংরেজি ডেলির জন্য রমেশ সিপ্পীর কাছে। লেখার বিষয় শোলের পর আর কেন সেই সফলতা পাননি তার কারণ জানতে। দিলীপ আর অমিতাভ অভিনীত ফিল্ম শক্তি ওর সেই ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে। শোলের মত বক্স অফিস সফলতা না পেলেও দিলীপ অমিতাভ বাপ ছেলের চাপা বিরোধ বড়ো পর্দায় দেখে চোখের পলক ফেলতে ভুলেছিল গোটা ফিল্মী দুনিয়া। এটাই আমার বড়ো প্রাপ্তি জানিয়ে ছিলেন শোলে, সাগর, শান এর পরিচালক।

একই কথা বলেছিলেন যশ চোপড়া। যশরাজ ফিল্মসের সিলভার জুবিলি কভার করতে ওর জুহুর অফিসে গিয়েছিলাম। মশাল ফিল্মের সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্য শুট হয়েছিল কোলাবার ব্যালারড পিয়ারে, গভীর রাতে। পরপর তিন রাতে শুট হয়েছিল সেই অবিস্মরনীয় সিন, যা হিন্দি ফিল্মের ইতিহাসে মাইল স্টোন। মাঝরাতে সেই কলজে নিংড়ানো আর্তি- এ ভাই গাড়ি রোকো, গাড়ি রোকো ভাই, মেরে বিবি মর রহি হ্যায়। পর্দায় দিলীপকুমার এর অভিনয় রিল আর রিয়াল লাইফ এর দুরত্ব মিটিয়ে দিয়েছিল এক লহমায়। কে ভুলতে পারবে বিমল রায়ের দেবদাস এর অমোঘ ডায়ালগ “কোওন কমবাখত জিনে কে লিয়ে পিতা হ্যায়”, বা মুঘলে আজম এর সেই সিন, সেখানে প্রবল প্রতাপি জালালউদ্দিন আকবরের মুখোমুখি প্রিন্স সেলিম। অভিনয় নয় তামাম দুনিয়ায় হতাশ প্রেমিকদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন দিলীপ কুমার। লিখতে গিয়ে মনে পড়ে যাচ্ছে গঙ্গা যমুনার, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো যুবকটির কথা। যে বন্দুক হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল। কে ভুলে যাবে সেই তরুণের কথা যে দিলীপ কুমার অভিনীত শহীদ দেখে পকেটে চল্লিশ টাকা নিয়ে নায়ক হতে পাঞ্জাব থেকে পা রেখেছিল মায়া নগরী বোম্বেতে। সেই সফল অভিনেতা দিলিপসাব এর দুনিয়াজোড়া অজস্র ফ্যানদের মধ্যে অন্যতম। তিনি আর অন্য কেউ নয় দিলীপ সাহেবের ছোট ভাই ধর্মেন্দ্র। দিলীপকুমার দাদা সাহেব ফালকে পাওয়ায় পর অমিতাভ জানিয়েছেন বোম্বেতে অভিনয়ের জন্য যে বিশ্ববিদ্যালয় আছে তার নাম দিলীপ কুমার। “আমাদের বেঞ্চমার্ক হলেন ইউসুফ সাব। ওই উচ্চতা ডিঙ্গানোর সাধ বা সাধ্য কারো নেই। সত্যি কথা বলতে গেলে, লোকে আমার অভিনয়ের ফ্যান, আর আমি ফ্যান ইউসুফ সাবের। অভিনয় করতে গিয়ে আমার মধ্যে একটি কমপ্লেক্স কাজ করে সেই কমপ্লেক্স এর নাম দিলীপ কুমার। আমার সঙ্গে দিলীপ সাবের অভিনয়ের তুলনা করে অনেকে, কিন্তু আমি অভিনেতা আর দিলীপ সাব অভিনেতাদের অভিনেতা।” 

দেশে নয় বিদেশেও অভিনয়ের জন্য আদৃত সেই অভিনেতা। Lawrence of Arabia ফিল্মে ওর ছাড়া রোলে অভিনয় করে জনপ্রিয় হন ওমর শরীফ। টোয়েন্টি সেঞ্চুরি ফক্সের ফিল্ম When The Rain Came ফিল্মেও অভিনয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। 

আজ দিলীপ কুমারের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে তিনি সেঞ্চুরী করতেন আজ। শেষ করি অপ্রিয় সত্য দিয়ে। কলকাতার কোনও কাগজে এক লাইন ও লেখা হয়নি এই অভিনেতাকে নিয়ে। এমনকি কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শুরু হবে অমিতাভ বচ্চনের ফিল্ম অভিমান দিয়ে।

ভারত বর্ষের ফিল্মী দুনিয়ার মেথড অ্যাক্টিং এর শেষ কথা, অ্যাক্টিং নয় ক্যামেরার সামনে ন্যাচরাল অ্যাক্টিং এর সিম্বল দিলীপ কুমারের জন্ম শতবর্ষে ওর ফিল্ম দিয়ে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শুরু করা যেতনা! এসব কর্তাভজা পণ্ডিতমন্যদের সম্পর্কে বলে লাভ নেই। লাভ নেই গদি মিডিয়াকে গুরুত্ব দিয়ে। ওরা চলুক ওদের পথে আর আমরা আমাদের পথে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর