
চন্দননগরে পাকিস্তানি নাগরিক অভিযোগে ফতেমা বিবি (৬০) নামে এক বৃদ্ধাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাঁকে আটক করা হয়। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছিলেন তিনি। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ফতেমার পক্ষে দাঁড়িয়ে মানবিক বিবেচনায় মুক্তির দাবি তুলেছেন।
ফতেমার স্বামী মুজাফফর মল্লিক জানান, ১৯৮০ সালে পাকিস্তান থেকে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতে আসেন ফতেমা। ১৯৮২ সালে চন্দননগরের বেকারি ব্যবসায়ী মুজাফফরের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পরিবারের দাবি, ফতেমার জন্ম ভারতে। পূর্বপুরুষের বাড়ি হুগলির নালিকুলে। পরবর্তীতে পিতার কর্মসূত্রে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে চলে যান তিনি। সেখান থেকে বৈধ ভিসায় ফেরত এলেও সময়মতো দেশে ফিরে যাননি। ৪৫ বছর ধরে এখানেই সংসার করেছেন। দু’মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। স্বামীর মতে, ফতেমার স্বাস্থ্য সংকটাপন্ন—হাঁটুতে অপারেশন জরুরি, নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়।
প্রতিবেশীরা জানান, ফতেমাকে পাকিস্তানি বলে কেউ জানতেন না। এক বাসিন্দার কথায়, “৪ দশক ধরে তিনি এখানে। ভোটার কার্ডে নাম ছিল। এখন তাঁকে ফেরত পাঠালে পাকিস্তানে কেউ নেই।”
পাহালগাঁও ঘটনার পর কেন্দ্রের নির্দেশে বিভিন্ন রাজ্যে পাক নাগরিক খুঁজছে প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় চন্দননগর গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তে ফতেমার বিষয়টি ধরা পড়ে। আদালত তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
চন্দননগর পুরসভার ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল বলেন, “১৯৮০-এর দশকে ভোটার তালিকায় নাম ওঠার বিষয়টি তৎকালীন প্রশাসনের ত্রুটি। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে সমাধান চাই।” সিপিএম নেতা ঐকতান দাশগুপ্ত একে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গাফিলতি বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, বিজেপির গোপাল চৌবে দাবি করেন, “এলাকায় আরও অনেক পাক নাগরিক লুকিয়ে আছেন। আধার-প্যানের মতো ডকুমেন্ট পেয়ে গেছেন। সকলকে চিহ্নিত করতে হবে।”

ফতেমার আইনি অবস্থান নিয়ে জটিলতা থাকলেও স্থানীয় স্তরে তাঁর প্রতি সহমর্মিতা লক্ষণীয়। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে দশকের পর দশক ভোটার তালিকায় নাম থাকল? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা। তবে পরিবার ও সমর্থকদের আশা, মানবাধিকার সংস্থা বা ট্রাইবুনালের হস্তক্ষেপে ন্যায় মিলবে।
ফতেমা বর্তমানে জেলে। অসুস্থতার কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বজনরা। এই ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা ও নাগরিকত্ব নিয়ে রাজনৈতিক বাদানুবাদ অব্যাহত রয়েছে।