
কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত একটি অভূতপূর্ব রায়ে ৭ মাসের শিশুকন্যাকে পাশবিক ধর্ষণের দায়ে ৩৪ বছর বয়সী রাজীব ঘোষকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। মামলাটির বিচারকার্য মাত্র ৮০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করে নজির গড়েছে আদালত। এ ছাড়া, নির্যাতিত শিশুটির পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ৩০ নভেম্বর কলকাতার বড়তলা ফুটপাথে বসবাসরত এক দম্পতি তাদের সাত মাসের শিশুকন্যাকে কিছু সময়ের জন্য একা রেখে কোথাও যান। এই সুযোগে শিশুটিকে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর ফুটপাথের অদূরে জ্ঞানহীন অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। পরিবার তার যৌনাঙ্গে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশকে জানায়। আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসার সময় ধর্ষণের প্রমাণ মেলে।
পুলিশ রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দা রাজীব ঘোষকে চিহ্নিত করে। ৪ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিশুটির পোশাক থেকে সংগৃহীত ডিএনএ নমুনা অভিযুক্তের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়।
মামলাটি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬(২), ৫০৬(২) ধারা এবং পকসো আইনের ৬ নম্বর ধারায় দায়ের করা হয়। মাত্র ২৬ দিনের মধ্যে ১৩ পাতার চার্জশিট জমা দিয়ে দ্রুত বিচারের পথে এগোয় পুলিশ। বিচারক ইন্দ্রিলা মুখার্জি মিত্র এই মামলাকে “বিরলতম অপরাধ” আখ্যায়িত করে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। তিনি বলেন, “নির্যাতিতা শিশুর মৃত্যু না হলেও তার শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। এমন নৃশংসতা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।”
পুলিশের ডিসি (উত্তর) দীপক সরকার জানান, “সিসিটিভি ফুটেজ ও ফরেনসিক প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে রেকর্ড সময়ে তদন্ত শেষ করা হয়। মাত্র ৭৮ দিনের মধ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা গেছে।” সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় এই রায়কে “ঐতিহাসিক” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ড সাধারণত মৃত্যুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু এই রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, অপরাধের ভয়াবহতা ও নির্যাতিতার ভবিষ্যৎ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।”
এই রায় শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধে শাস্তি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত তদন্ত, ডিএনএ প্রমাণের ব্যবহার এবং কঠোর শাস্তির মাধ্যমে এই মামলা ভবিষ্যতে অনুরূপ অপরাধ রোধে ভূমিকা রাখবে। শিশু সুরক্ষা আইনের কঠোর প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বাড়ানোই এখন মূল লক্ষ্য।