Thursday, February 13, 2025
24 C
Kolkata

কৃষ্ণাঙ্গ ভারতীয় শ্রমিকদের প্রতি অমানবিক কঠোরতা কিন্তু নিষিদ্ধ মাদক সেবনে অভিযুক্ত স্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ রাজপুত্রের জন্য বিশেষ সুবিধা ট্রাম্প প্রশাসনের

বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি ও অভিবাসন নীতিতে দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক বিরাজমান। ব্রিটেনের রাজকুমার হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান, যাঁরা ২০২০ সালে রাজপরিবার ছেড়ে আমেরিকায় অবস্থান শুরু করেছিলেন, তাঁদের ভিসা নিয়ে উঠা বিতর্ক ও ট্রাম্পের বক্তব্য “আমি এখনই ওটা করতে চাই না, ওঁকে ছেড়ে দিতে চাই” এই ইস্যুর কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, একই সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধভাবে অবস্থানরত গরীব, কৃষ্ণাঙ্গ ভারতীয় শ্রমিকদের প্রতি এমন কড়া ও অমানবিক আচরণ অবলম্বন করছে, যা দ্বৈত নীতির চরম উদাহরণ হিসেবেই তুলে ধরা যায়। এই রিপোর্টে উভয় বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, যেখানে একপাশে রাজকুমারের ভিসা বিতর্কে ট্রাম্পের উদাসীনতা এবং অন্যপাশে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তার নিষ্ঠুর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সমালোচনা তুলে ধরা হয়েছে।

২০২০ সালে ব্রিটেনের রাজকুমার হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান রাজপরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমেরিকায় নতুন জীবন শুরু করেন। তাঁদের আমেরিকান ভিসা নিয়ে কিছুদিন আগে প্রশ্ন উঠেছিল – হ্যারি তাঁর ভিসার আবেদনে মাদক সেবনের তথ্য গোপন করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল, যা তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশের পর আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। যদিও নিজে তিনি ভিসার আবেদনে জানান, “আমি কোনো মাদক সেবন করি না”, তবে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে যাওয়ার পর তাঁকে ভিসার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে।

নিউ ইয়র্ক পোস্টের কাছে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, “আমি এখনই ওটা করতে চাই না। ওঁকে (হ্যারিকে) ছেড়ে দিতে চাই।” তিনি আরও বলেছিলেন যে, যদি ক্ষমতায় আসেন, তাহলে হ্যারি ও মেগানের ভিসার আবেদনপত্রে কোনো মিথ্যা তথ্য থাকলে তা খতিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এই মন্তব্যে স্পষ্ট প্রতীয়মান হলো – একজন অভিবাসী হিসাবে তাঁকে নিষ্ক্রিয় করা বা দেশে থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত নন, যদিও তাঁর বক্তব্য পূর্বে ভিসা সংক্রান্ত বিতর্কে কঠোর নীতির আশ্বাসও দিয়েছিলেন।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করে। সীমান্তে অবৈধভাবে প্রবেশকারী, অপরাধে অভিযুক্ত বা নথিপত্রহীন অভিবাসীদের আটক ও দেশে ফিরিয়ে পাঠানোর জন্য তিনি সামরিক বাহিনী ও আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) সহ বিভিন্ন সংস্থার দ্বারা জোরালো পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। আমেরিকান প্রসাশনের প্রকাশ করা বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, ১০৪ জন ভারতীয় অভিবাসীকে সামরিক বিমানে হাতে হাতকড়া ও শিকলে পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।তাদেরকে সামরিক বিমানে দীর্ঘ ৪০ ঘণ্টার বেঁধে রেখে দেশে পাঠানো হয়, যা মানবিক মর্যাদা ও স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করেছে ।

যেখানে ব্রিটেনের রাজকুমারকে (একজন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিত্ব) আমেরিকায় অবৈধভাবে অবস্থানরত হলেও তাঁর ভিসা নিয়ে বিতর্ক উঠলেও ট্রাম্প বর্তমানে তাঁকে দেশ ছাড়তে বলার বা বিদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আগ্রহী নন, অন্যদিকে, দেশের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে অবস্থানরত কম আয়ের, কৃষ্ণাঙ্গ ভারতীয় শ্রমিকদের সাথে একেবারে ভিন্ন ও অত্যন্ত ঘৃণ্য, কঠোর, অপমানকর আচরণ করা হচ্ছে। এই দুইটি নীতির মধ্যে স্পষ্ট দ্বৈত মানদণ্ড বিদ্যমান, যা স্পষ্টভাবে জাতিগত ও সামাজিক বৈষম্যের উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

ট্রাম্পের বক্তব্য ও তাঁর প্রশাসনের আচরণ গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। তাঁর বক্তব্যে দেখা যায়, “আমি শুধু আমার দেশের মানুষের কথা ভাবছি,” এমন বার্তা প্রেরণ করা হচ্ছে যা স্পষ্টভাবে অন্য জাতি বা ভিনদেশী মানুষের প্রতি অবজ্ঞা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করে। অবৈধ অভিবাসীদের “অপরাধী” হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, এমনকি সামরিক বাহিনীর সহায়তায় তাঁদের হাত-পা শিকলে বাঁধা অবস্থায় ফেরত পাঠানো, এইসব ব্যবস্থাপত্রই জাতিগত ও সামাজিক বৈষম্যের মারাত্মক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি যেখানে একপাশে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলে ধরে, অন্যপাশে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতি উদার আচরণ দেখানোর মাধ্যমে একটি দ্বৈত নীতি অবলম্বন করছে। মানবাধিকার, সমতা ও ন্যায়বিচারের প্রেক্ষিতে এই দ্বৈততা অনৈতিক বলে গণ্য হওয়া উচিত। অবৈধ অভিবাসীদের মানবিক মর্যাদা রক্ষার পরিবর্তে তাঁদেরকে “অপরাধী” বলে চিহ্নিত করে, তাঁদের শিকলে বাঁধা, হাতকড়ার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো—এমন ব্যবস্থা মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিচয়।

ট্রাম্পের বক্তব্য ও ব্যবস্থাপনার পেছনে যে জাতিগত ও সামাজিক বৈষম্য বিদ্যমান, তা স্পষ্ট। ব্রিটেনের রাজকুমার হ্যারি ও মেগানের ক্ষেত্রে তাঁর উদাসীনতা এবং একই সময়ে দেশের দরিদ্র, কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসীদের প্রতি যে রুক্ষতা প্রদর্শিত হচ্ছে, তা দ্বৈত নীতির পরিষ্কার উদাহরণ। এই ধরণের নীতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমেরিকার ইমেজকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং জাতিগত বৈষম্য ও অসমতা প্রসারিত করে।

ট্রাম্পের নীতিমালা শুধু সামাজিক ও মানবিক দিক থেকে নয়, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি অতিরিক্ত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। যেমন, ভারতের সঙ্গে ইতিমধ্যেই মোদীর ফোনালাপে ট্রাম্প জানান যে, “যা সঠিক তাই করবেন” এই ধরনের কথোপকথন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর প্রশ্নচিহ্ন তুলে ধরে। এছাড়াও, সামরিক ফ্লাইট ব্যবহারে যে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে, তা দেশের আর্থিক ভারসাম্য ও বাজেট নীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অনেক মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিকে কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলছেন, “এমন ব্যবস্থাপানা মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের বিরোধী।” বিশেষ করে, অভিবাসীদেরকে ৪০ ঘন্টার ফ্লাইটে হাত-পা শিকলবদ্ধ অবস্থায় রাখা, এমনকি টয়লেট ব্যবহারের সময়ও শিকল না খোলা মধ্যযুগীয় বর্বরতার নিদর্শন। ইউএস বর্ডার প্যাট্রোল প্রধান মাইকেল ব্যাংকস শিকলবদ্ধ অভিবাসীদের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তাদের কালো চামড়ার জন্য ভারতীদের এলিয়েন বা ভিনগ্রহী ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ ও চরম অপমান করেছেন ।

মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেলে ট্রাম্প সরকারের এই নীতি ভারতীয়দের অত্যন্ত ঘৃণ্য, অপমানকর ও তীব্র বিদ্বেষমূলক। অনেকেই দাবি করেছেন, এই নীতি শুধু আবাসন সমস্যা সমাধানে নয়, বরং দেশের ইমেজ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

ভারতের অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। অনেক ভারতীয়, যারা উন্নত জীবনের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছে—কিভাবে তাঁরা মানবিক মর্যাদার অভাব, শিকলে বাঁধা ও অন্যান্য অমানবিক ব্যবহারের সম্মুখীন হচ্ছেন। এই অভিজ্ঞতা শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষতি করছে না, বরং তাঁদের পরিবার ও সমাজের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পর্যায়ে ট্রাম্পের এই নীতির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দ্বৈত নীতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমেরিকার অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে। এছাড়াও, দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে এ ধরনের নীতির প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক না থেকে বরং নেতিবাচক মনোভাব ও প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে একদিকে ব্রিটেনের রাজকুমার হ্যারি ও মেগানের ভিসা বিতর্ক নিয়ে উদাসীনতা, অপরদিকে অবৈধভাবে থাকা গরীব, কৃষ্ণাঙ্গ ভারতীয় শ্রমিকদের প্রতি অমানবিক ও বিদ্বেষমূলক আচরণ এই দুইটি দিক স্পষ্টভাবে দ্বৈত নীতির পরিচয় বহন করে। মানবাধিকার, সামাজিক সমতা ও ন্যায়বিচারের মূলনীতি থেকে বিচ্যুতি ঘটছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও দেশের আর্থিক ভারসাম্যের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব অস্বীকারযোগ্য।

কলম্বিয়া ও ব্রাজিলের সহ অন্যান্য দেশগুলিও মার্কিন সামরিক বিমানে অভিবাসী প্রত্যাবাসনের নিন্দা জানিয়েছে। ব্রাজিল সরাসরি এই পদ্ধতিকে “অমানবিক” বলে আখ্যায়িত করেছে।

মোদি সরকারের উচিত ট্রাম্পের সাথে আলোচনায় মানবাধিকার ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং ভারতীয় অভিবাসীদের শিকলবদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘসময় আটকে রাখা এবং মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘন করার জন্য সর্বসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া। ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝানো উচিৎ এই নীতির মাধ্যমে শুধু ভারতীয়রাই নয়, বৈশ্বিক মানবাধিকারও ক্ষুণ্ণ হয়েছে যা ভারত সহ বিশ্বের সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা কখনই মেনে নেবে না।

Hot this week

ইসরায়েল সরকারের উগ্র যুদ্ধাং দেহি মনোভাব: মানবতার উপর অবিচার

বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের গাজা অবরুদ্ধ এবং ওয়েস্ট ব্যাংকে চলমান...

রাজ্য হাই মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করলো মোহাম্মাদিয়া হাই মাদ্রাসা

হাই মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে...

ছোট পোশাক পরে “পানশালায় নাচ” আইনত অপরাধ নয় ,রায় দিল দিল্লি আদালত

মহিলারা ছোট পোশাক পরে পানশালায় নাচলে তা ভারতীয় সংবিধানে...

“ঋত্বিক” আতঙ্কে কাঁপছে শাসক,বন্ধ হল “আমার লেলিন”-এর প্রদর্শন !

"পাগল হরে মা… পাগল হ। এই দুনিয়ায় সবাই পাগল।...

Topics

ইসরায়েল সরকারের উগ্র যুদ্ধাং দেহি মনোভাব: মানবতার উপর অবিচার

বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের গাজা অবরুদ্ধ এবং ওয়েস্ট ব্যাংকে চলমান...

রাজ্য হাই মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করলো মোহাম্মাদিয়া হাই মাদ্রাসা

হাই মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে...

ছোট পোশাক পরে “পানশালায় নাচ” আইনত অপরাধ নয় ,রায় দিল দিল্লি আদালত

মহিলারা ছোট পোশাক পরে পানশালায় নাচলে তা ভারতীয় সংবিধানে...

ইউপিএসসিতে দেশের মধ্যে প্রথম শিলিগুড়ি জয়দ্বীপ রায়বাংলার গৌরভ বাঙালির গর্ব

শিলিগুড়ির প্রতিভা জয়দীপ রায় UPSC কম্বাইন্ড জিও সায়েন্টিস্ট এক্সাম...

ভারতসহ ১৪ টি দেশের শিশুদের হজে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি করল সৌদি প্রশাসন!

সৌদি আরবের প্রশাসনের নির্দেশানুযায়ী চলতি বছর থেকেই শিশুদের হজ...

উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে বামনহাট স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনা

উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে বামনহাট স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনা গত বছর উত্তরবঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা...

Related Articles

Popular Categories