
সংসদে মনুস্মৃতি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিকে হিন্দু ধর্ম থেকে বহিষ্কার করেছেন জ্যোতির্মঠের শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ। গত তিন মাস ধরে চলা এই বিতর্কের অবসান টেনে ধর্ম সংসদের পক্ষ থেকে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত এ বছরের আগস্ট মাসে, যখন সংসদে বক্তব্য রাখার সময় রাহুল গান্ধি প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ মনুস্মৃতিকে “ধর্ষকদের রক্ষাকারী” বলে উল্লেখ করেন। তাঁর এই মন্তব্যে দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। হিন্দু সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে, এই গ্রন্থটি সনাতনী সম্প্রদায়ের জন্য পবিত্র এবং রাহুলের বক্তব্যে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।
এরপরই গত সেপ্টেম্বরে উত্তরাখণ্ডের মহাকুম্ভ মেলায় স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সাংবাদিকদের সামনে রাহুলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। তিনি এক মাসের মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনা বা ব্যাখ্যা দাবি করে ধর্ম সংসদের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠান। পরবর্তীতে রিমাইন্ডারও জারি করা হয়। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও রাহুল গান্ধি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি বলে দাবি করেন শঙ্করাচার্য।

বৃহস্পতিবার এক প্রেসব্রিফিংয়ে স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ বলেন, “রাহুল গান্ধি হিন্দুধর্মের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে বারবার অবস্থান নিয়েছেন। মনুস্মৃতির অবমাননা আমাদের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তাঁকে হিন্দু সম্প্রদায় থেকে বহিষ্কার করা হলো। এখন থেকে কোনো হিন্দু মন্দিরে তাঁর প্রবেশ নিষিদ্ধ, পুরোহিতরা তাঁর কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “প্রত্যেক ধর্মেরই নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। কেউ যদি সেই নিয়ম ভাঙেন, তবে শাস্তি অনিবার্য। রাহুল ক্ষমা চাইলে বা যুক্তি দিলে বিবেচনা করা যেত। কিন্তু তিনি নীরব থাকায় এই সিদ্ধান্তই শেষ পথ।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ঘটনা আগামী দিনে ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক আরও উসকে দিতে পারে। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতৃত্ব এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, হিন্দুত্ববাদী ইস্যুতে বিরোধী দলের ভূমিকা কঠিন হতে চলেছে এই সিদ্ধান্তের পর।

মনুস্মৃতি প্রাচীন হিন্দু আইন ও সমাজবিধি সংবলিত একটি গ্রন্থ, যা বর্তমান যুগে নারী ও নিম্নবর্ণ সম্পর্কিত কিছু বিধানের জন্য সমালোচিত। রাহুল গান্ধির মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি নারী নিরাপত্তা ও সামাজিক সমতার প্রশ্ন তুললেও হিন্দু সংগঠনগুলি এটিকে “ঐতিহ্যের অপমান” বলে গণ্য করেছে।
ধর্ম সংসদের এই ঘোষণা আইনি বা সামাজিকভাবে কতটা প্রভাব ফেলে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের এমন সিদ্ধান্তের আইনি ভিত্তি একেবারেই অস্পষ্ট। তবে, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব গভীর হতে পারে বলে অনুমান।