কবিগুরুকে বহিরাগত তকমা: প্রতিবাদে ঐক্য বাংলা

এনবিটিভি ডেস্ক, কলকাতা : গত কয়েক দিন ধরেই উতপ্ত হয়ে রয়েছে বিশ্বভারতীর পরিবেশ। এর মধ্যেই গত শনিবার একটি বিবৃতিতে ও চিঠির মাধ্যমে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্রী বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তিনি সরাসরি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বহিরাগত’ তকমা লাগিয়ে দেন।
এখানেই না থেমে তিনি আরো যোগ করেন যে ,’শান্তিনিকেতনে পড়লেই রাবীন্দ্রিক হওয়া যায় না’। এছাড়াও সেখানে কর্মরত বাঙালিদের যোগ্যতা ও মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেকে শুরু করে পৌষ মেলা নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ উঠে এসেছে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সর্ম্পকে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বহিরাগত’ তকমা দেওয়ার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগ চেয়ে একটি গণ-ইমেইল কর্মসূচির আয়োজন করল বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদি সংগঠন ‘ঐক্য বাংলা’ ।

ঠিক কেন আয়োজন করা হল এই গণ-ইমেইল কর্মসূচি ?

উত্তরে ‘ঐক্য বাংলা’ সংগঠনের প্রধান মুখ তথা সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান , ‘ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলার তথা বাংলার ভূমিসন্তানদের গর্ব তো বটেই, এটি সমগ্র ভারতের গর্ব। এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য পদে বসে যেভাবে বিদুৎ চক্রবর্তী মহাশয় স্বয়ং শান্তিনিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়েছেন , তা সমগ্র বাংলা তথা বাঙালির অপমান। বাংলার মানুষ চুপ করে বসে থাকতে পারে না। এজন্যই আমরা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করি। বিদ্যুৎ বাবুর পদত্যাগ চাই’।

‘ঐক্য বাংলা’ সংগঠনের সদস্য শ্রী অভিজিৎ গুহ নিয়োগী পরিষ্কার জানাচ্ছেন , ‘যেভাবে বিদ্যুৎ বাবু এই মন্তব্য করেছেন , তা ক্ষমার অযোগ্য । উনাকে অবিলম্বে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।’

কিন্তু এতেও যদি কিছু না হয় তখন ‘ঐক্য বাংলা’ কি পদক্ষেপ নেবে ?

ঐক্যযোদ্ধা শ্রী সৌম্য চৌধুরী স্পষ্ট ভাষায় জানালেন , ‘এই ধরনের মন্তব্য করার ফলে উনি সমগ্র বাঙালি জাতির ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত উনি উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করছেন , আমরা গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।’

অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে মাত্র ছ’মাস বয়সী বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদি সংগঠন ‘ঐক্য বাংলা’ কোনোভাবেই এই ইস্যু থেকে পিছু হটবে না।

কিন্তু কিভাবে এই জায়গাতে এলাম আমরা? বাংলার মাটিতে বাঙালির অধিকার কি ক্রমশই কমে যাচ্ছে?

ঐক্য বাংলার সহ-সম্পাদক শ্রী দেবায়ন সিংহ জানান, ‘একদমই তাই। সাংবিধানিক অধিকার এর বৈষম্য থেকে শুরু করে ১৯৪৭ থেকেই বাঙালি একটু একটু করে নিজের মাটিতে অধিকার হারাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে তার সাথে যুক্ত হয়েছে সর্বভারতীয় স্তরে বাংলা ও বাঙালি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো। যুক্ত হয়েছে বাঙালির হীনমন্যতা। হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ, বলিউড, তথাকথিত সর্বভারতীয় কিন্তু আসলে হিন্দি প্রতিনিধি মিডিয়ার সামনে বাঙালিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে তারই সামনে তুলে ধরা। এই ক্রীতদাস অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য ই আমাদের আন্দোলন।’

যেভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন সময় একের পর এক অভিনব ও কার্যকর কর্মসূচি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এই মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদি সংগঠন৷ তাতে তাঁরা যে আপামর বাঙালি সমাজকে নতুন ভরসার জোগান দিচ্ছে , তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই।

Latest articles

Related articles