১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫, নদিয়ার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (ম্যাকাউট)-এর হরিণঘাটা ক্যাম্পাসে এমটেক প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী পাঁচতলা বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান। ঘটনাটি ঘটেছে পরীক্ষার দিন সোমবার। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পপরেও পরিবারের সাথে ঐ ছাত্রীর কোনোও প্রকার যোগাযোগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরীক্ষার হলের বিল্ডিং-এর তার ব্যাগ পাওয়া যায়, এবং পরে আরও খোঁজাখুঁজির পর ওই বিল্ডিং-এর নিচেই তার লাশ উদ্ধার করা হয়। গুরুতর জখম নিয়ে তাকে হরিণঘাটা গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন ।
এখন প্রশ্ন উঠেছে
- কেন তিনি পাঁচতলায় উঠেছিলেন?
- নিরাপত্তাকর্মী ও সিসিটিভি থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তিনি বিল্ডিংয়ের ছাদে প্রবেশ করলেন?
- স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্ত্বেও কেন ব্যবহার করতে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?
ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখিয়ে দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁক রয়েছে। পুলিশ তদন্তে নেমেছে, তবে এখনও কোনো স্পষ্ট কারণ জানা যায়নি ।
এই ঘটনার আগে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ম্যাকাউটের অ্যাপ্লাইড সাইকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা পায়েল ব্যানার্জিকে নিয়ে বিতর্ক ছড়ায়। একটি ভাইরাল ভিডিওতে তাকে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের সাথে বাংলা হিন্দু বিবাহ রীতি পালন করতে দেখা যায়। ভিডিওতে অধ্যাপিকা লাল বেনারসি শাড়ি পরিহিত অবস্থায় ছাত্রের গলায় মালা পরাচ্ছেন, এমনকি সিঁদুর দানও দেখা গিয়েছিল। এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর অধ্যাপিকা ইস্তফা দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ছুটিতে পাঠায় ।
- এটি একটি “সাইকো-ড্রামা” প্রকল্পের অংশ ছিল, যা ছাত্র ও কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে মঞ্চস্থ হয়েছিল ।
- তার বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে ভিডিওর একটি অংশ লিক করা হয়েছে ।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এই দাবি খারিজ করে এটিকে “ফ্রেশার্স ওয়েলকামের সস্তা নাটক” আখ্যা দেয় । এ ঘটনায় অধ্যাপিকা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা দেন ।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, যার ৬১% নারী । আত্মহত্যার প্রধান মাধ্যমগুলোর মধ্যে ছাদ থেকে ঝাঁপ ৪.৬% ক্ষেত্রে ঘটেছে । মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সর্বাধিক (৪৬.১%), তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও এটি ক্রমবর্ধমান ।
ম্যাকাউটের এই ঘটনাগুলো আত্মহত্যা প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
এই রকমের দুঃখজনক ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিৎ সিসিটিভি ও নিরাপত্তাকর্মীদের তদারকি বৃদ্ধি, আঁচল ফাউন্ডেশনের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য কাউন্সেলিং সেন্টার চালু করা।
পূর্ববর্তী বিতর্কের মতো ঘটনায় দ্রুত ও ন্যায্য তদন্ত নিশ্চিত করা।
ম্যাকাউট কর্তৃপক্ষের এখন চাপ রয়েছে শিক্ষার্থীদের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার।