মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং-এর পদত্যাগ: অমিত শাহের সাথে ১৫ মিনিটের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত
৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ রাজ্যের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত নেন, যে তিনি ইম্ফলে ফিরে এসেই পদত্যাগ করবেন। ঐ একই দিনে ইম্ফলে রাজ্যপাল অজয়কুমার ভল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দেন। তার পদত্যাগপত্রে লেখা ছিল, “এত দিন মণিপুরের মানুষের সেবা করতে পেরেছি, এটা আমার কাছে সম্মানের। মণিপুরবাসীর স্বার্থ রক্ষার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ করা এবং নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।” এই বক্তব্যে তার নিজেরই কাজের প্রশংসা ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অবাধ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতির বিবর্তনকেও ইঙ্গিত করে।
কংগ্রেস মণিপুর বিধানসভায় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছিল। এমনকি বিজেপির কিছু বিধায়কও বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং ভোটাভুটিতে সমর্থন দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন ।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আশঙ্কা করছিল যে অনাস্থা ভোটে পরাজয় হলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। এমতাবস্থায়, দলীয় নির্দেশে বীরেন সিং স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন ।
নয়াদিল্লিতে সকালবেলা অনুষ্ঠিত মাত্র ১৫ মিনিটের বৈঠকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডার সহ ১৪ জন বিজেপি ও নাগা পিপল্স ফ্রন্ট (এনপিএফ) বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উঠে আসা বিষয়গুলোরই ছাপ স্পষ্ট করে যে, বীরেন সিংহের পদত্যাগ আজ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে মেইতেই ও কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সহিংসতায় এ পর্যন্ত কয়েকশত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, হাজারো বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, এবং রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দফায় দফায় সংঘর্ষের ছাপ পড়তে থাকে। শুধু মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি নয়, রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিধায়কের বাড়িতেও উন্মত্ত জনতার আক্রমণের খবর পাওয়া যায়। পাঁচটি জেলায় কার্ফু আরোপ করা হয় এবং অবিলম্বে ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সূত্র অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সংঘর্ষে কয়েকশো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে ও অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও রাজনৈতিক ঘৃণা জোরদার হওয়ার কারণে, যদি ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হতো তাহলে সরকারের পতনের সম্ভাবনা ছিল। এসব চাপ ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে, কেন্দ্রীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি সামনে আনা হয়। যার ফলাফল এই হঠাৎ পদত্যাগ।
মণিপুর রাজ্যের অস্থিরতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ ধরনের পদক্ষেপ সবসময়ই রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। এন বীরেন সিংহের পদত্যাগ শুধু তাঁর প্রশাসনিক দায়িত্বের ইতি নয়, বরং রাজ্যের জনজীবনে চলমান সমস্যা ও প্রতিক্রিয়ার ফলাফল। ভবিষ্যতে রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জনগণের প্রত্যাশা কীভাবে পুনর্গঠিত হবে, তা নিয়ে সবাই একদৃষ্টে মণিপুরের দিকে চেয়ে আছে। নতুন নেতৃত্বের আগমন ও সমস্যার সমাধানে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
মণিপুরের এই রাজনৈতিক পরিবর্তন মণিপুরের ভবিষ্যতের নতুন দিক নির্দেশনা ও সমস্যাগুলির সমাধানের নতুন সম্ভাবনা এনে দিতে পারে, তবে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য জনগণের আস্থা ও শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রয়োজন অপরিহার্য।