Monday, June 9, 2025
33 C
Kolkata

সরকারের নিরাপত্তার ত্রুটির সুযোগ নিয়ে কাশ্মীরে পাকিস্তানি জঙ্গীদের নৃশংস হামলার বলী ২৬ জন নিরীহ হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষ

২২ এপ্রিল(২০২৫), কাশ্মীরের পাহালগামে এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলায় উপত্যকার শান্তি রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এই ঘটনায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যা গোটা দেশকে একইসাথে শোকস্তব্ধ ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। বাইসারান উপত্যকায় প্রায় ২,০০০ পর্যটক উপভোগ করছিলেন প্রকৃতির সৌন্দর্য, কিন্তু সেখানে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এই হামলা শুধু একটি দুঃখজনক ঘটনাই নয়, বরং সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গভীর ত্রুটির একটি জ্বলন্ত প্রমাণ।

পাহালগামের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে সেদিন হাজার হাজার মানুষ ছিলেন—স্থানীয় বাসিন্দা থেকে বিদেশি পর্যটক, সবাই ছিলেন নিরাপত্তাহীন। পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইবার বেশ কিছু সশস্ত্র জঙ্গী বিনা বাধায় প্রবেশ করে এই পৈশচিক হামলা চালায়। কেউ কেউ ভারতীয় সেনার পোশাক পরে ছদ্মবেশে এসেছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “তারা এমনভাবে চলছিল যেন কেউ তাদের বাঁধা দিতে পারবে না। সত্যিই কেউ ছিল না তাঁদের বাঁধা দেবার জন্য।” এই নিরাপত্তাহীনতা কোনো ছোটখাটো ভুল নয়—এটি দীর্ঘদিনের নিরাপত্তায় অবহেলার ফল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার সামরিক বাহিনী থেকে ১,৮০,০০০ কর্মী কমিয়েছে এবং তিন বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। এর পেছনে ‘অর্থ সাশ্রয়’-এর যুক্তি দেওয়া হলেও, সেই অর্থ কোন খাতে গেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল এলাকায় নিরাপত্তা এভাবে দুর্বল করে দেওয়া সন্ত্রাসীদের জন্য পথ আরও সহজ করে দিয়েছে। জনগণের অভিযোগ, এই ব্যর্থতার দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের, যিনি তার দায়িত্ব পালনে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন।

এই হামলার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অমিত শাহের আমলে কাশ্মীরে ৩৭টিরও বেশি বড় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, যা তার নিরাপত্তা নীতির অকার্যকারিতার প্রমাণ। মানুষ এখন শুধু শোক প্রকাশ বা প্রতিশ্রুতি নয়, কঠোর পদক্ষেপ চায়। তারা দাবি করছে— হিংস্র সন্ত্রাসবাদীদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলির তদন্ত করা হোক, এবং নিরাপত্তা ত্রুটির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি দিতে হবে ও কাজে গাফিলতির উপযুক্ত কড়া শাস্তি দিতে হবে।

বিজেপি এই ঘটনাকে ধর্মীয় রঙ দেওয়ার কদর্য চেষ্টা করে চলেছে। নিহতদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। একজন মুসলিম পর্যটকের মৃত্যু এটাই মনে করিয়ে দেয় যে সন্ত্রাসবাদ কোনো ধর্ম দেখে আঘাত করে না। কাশ্মীরে বছরের পর বছর ধরে সন্ত্রাসীদের ধর্মের নামে হিংসায় হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এটি ধর্মের লড়াই নয়, বরং একটি জাতীয় সংকট, যা দমনে সরকারের দুর্বলতার কারণে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিদেশ সফর থেকে ফিরে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন, কিন্তু ক্ষুব্ধ জনগণ এখন কথা নয়, ফলাফল চায়। নিরাপত্তা বাহিনীকে শক্তিশালী করা, সামরিক খাতে কাটছাঁট পুনর্বিবেচনা করা, এবং কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি। এই ঘটনা শুধু কাশ্মীরের নয়, গোটা ভারতের ক্ষত। এখন সময় দায়িত্ব নেওয়ার—নইলে ইতিহাস এই ব্যর্থতাকে ক্ষমা করবে না।

Hot this week

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

ঈদের আগে উত্তেজনা: গাজিয়াবাদে মুসলিম মাংস বিক্রেতাকে গুলি করার হুমকি বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর

উত্তরপ্রদেশর গাজিয়াবাদে বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর সম্প্রতি একটি...

টাকার পরিমান দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার, গ্রেপ্তার ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার

চোখ ধাঁধানো গুপ্তধনের সন্ধান। ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার অমিত...

Topics

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলা!ধ্বংস করা হল ২৪০টির বেশি ঘর, নিহত হাজার হাজার নিরীহ মানুষ

গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে আসছে।...

Related Articles

Popular Categories