
২২ এপ্রিল(২০২৫), কাশ্মীরের পাহালগামে এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলায় উপত্যকার শান্তি রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এই ঘটনায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যা গোটা দেশকে একইসাথে শোকস্তব্ধ ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। বাইসারান উপত্যকায় প্রায় ২,০০০ পর্যটক উপভোগ করছিলেন প্রকৃতির সৌন্দর্য, কিন্তু সেখানে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এই হামলা শুধু একটি দুঃখজনক ঘটনাই নয়, বরং সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গভীর ত্রুটির একটি জ্বলন্ত প্রমাণ।
পাহালগামের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে সেদিন হাজার হাজার মানুষ ছিলেন—স্থানীয় বাসিন্দা থেকে বিদেশি পর্যটক, সবাই ছিলেন নিরাপত্তাহীন। পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইবার বেশ কিছু সশস্ত্র জঙ্গী বিনা বাধায় প্রবেশ করে এই পৈশচিক হামলা চালায়। কেউ কেউ ভারতীয় সেনার পোশাক পরে ছদ্মবেশে এসেছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “তারা এমনভাবে চলছিল যেন কেউ তাদের বাঁধা দিতে পারবে না। সত্যিই কেউ ছিল না তাঁদের বাঁধা দেবার জন্য।” এই নিরাপত্তাহীনতা কোনো ছোটখাটো ভুল নয়—এটি দীর্ঘদিনের নিরাপত্তায় অবহেলার ফল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার সামরিক বাহিনী থেকে ১,৮০,০০০ কর্মী কমিয়েছে এবং তিন বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। এর পেছনে ‘অর্থ সাশ্রয়’-এর যুক্তি দেওয়া হলেও, সেই অর্থ কোন খাতে গেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল এলাকায় নিরাপত্তা এভাবে দুর্বল করে দেওয়া সন্ত্রাসীদের জন্য পথ আরও সহজ করে দিয়েছে। জনগণের অভিযোগ, এই ব্যর্থতার দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের, যিনি তার দায়িত্ব পালনে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন।
এই হামলার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অমিত শাহের আমলে কাশ্মীরে ৩৭টিরও বেশি বড় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, যা তার নিরাপত্তা নীতির অকার্যকারিতার প্রমাণ। মানুষ এখন শুধু শোক প্রকাশ বা প্রতিশ্রুতি নয়, কঠোর পদক্ষেপ চায়। তারা দাবি করছে— হিংস্র সন্ত্রাসবাদীদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলির তদন্ত করা হোক, এবং নিরাপত্তা ত্রুটির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি দিতে হবে ও কাজে গাফিলতির উপযুক্ত কড়া শাস্তি দিতে হবে।

বিজেপি এই ঘটনাকে ধর্মীয় রঙ দেওয়ার কদর্য চেষ্টা করে চলেছে। নিহতদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। একজন মুসলিম পর্যটকের মৃত্যু এটাই মনে করিয়ে দেয় যে সন্ত্রাসবাদ কোনো ধর্ম দেখে আঘাত করে না। কাশ্মীরে বছরের পর বছর ধরে সন্ত্রাসীদের ধর্মের নামে হিংসায় হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এটি ধর্মের লড়াই নয়, বরং একটি জাতীয় সংকট, যা দমনে সরকারের দুর্বলতার কারণে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিদেশ সফর থেকে ফিরে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন, কিন্তু ক্ষুব্ধ জনগণ এখন কথা নয়, ফলাফল চায়। নিরাপত্তা বাহিনীকে শক্তিশালী করা, সামরিক খাতে কাটছাঁট পুনর্বিবেচনা করা, এবং কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি। এই ঘটনা শুধু কাশ্মীরের নয়, গোটা ভারতের ক্ষত। এখন সময় দায়িত্ব নেওয়ার—নইলে ইতিহাস এই ব্যর্থতাকে ক্ষমা করবে না।